নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে বিনা মূল্যে হেলমেট বিতরণ করেন তিনি

মোটরসাইকেলচালকদের বিনা মূল্যে হেলমেট বিতরণ করছেন রাঘবেন্দ্র কুমার (ডানে)ছবি: ডয়চে ভেলে

কাছের মানুষকে হারানো মনে গভীর রেখাপাত করতে পারে। রাঘবেন্দ্র কুমার নামের ভারতের এক ব্যক্তি এমন করুণ অভিজ্ঞতার পর পথ দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ব্রত নিয়েছেন। প্রায় এক দশক ধরে গোটা দেশ ঘুরে তিনি সাফল্যের মুখ দেখছেন।

রাঘবেন্দ্র কুমার এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। ভারতের মোটরসাইকেলচালকদের প্রাণের সুরক্ষাই তাঁর ব্রত। তিনি বিনা মূল্যে তাঁদের মধ্যে হেলমেট বিতরণ করেন। ফলে তিনি ‘ভারতের হেলমেটম্যান’ খেতাব অর্জন করেছেন।

২০১৪ সালে সবচেয়ে কাছের বন্ধু কৃষ্ণ কুমার ঠাকুর এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর পর রাজপথে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন রাঘবেন্দ্র কুমার। তিনি বলেন, ‘আমার ছোটবেলার বন্ধু কলেজেও আমার রুমমেট ছিল। তার বাবা-মা শিক্ষার জন্য ব্যয় করেছিলেন বটে, কিন্তু হেলমেট কেনার টাকা দেননি। ফলে কলেজের শেষ বছরে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তখনই আমি পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম শুরু করলাম। কেউ যেন আর আমার বন্ধুর মতো মারা না যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে হেলমেট পরেনি। বাকিরা যাতে পরে, আমি তা নিশ্চিত করব। তখনই এই মিশন শুরু করেছিলাম। তখন থেকেই আমি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’

রাঘবেন্দ্র চাকরি ছেড়ে নিজেকে পুরোপুরি এই প্রকল্পে উৎসর্গ করেন। সেই সঙ্গে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে জনহিতকর উদ্যোগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। প্রায় ৯ বছরে তিনি ভারতজুড়ে ৫৬ হাজারের বেশি হেলমেট বিতরণ করেছেন।

ভারতের রাজপথ অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। সেটাই দেশের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। রাঘবেন্দ্র সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আশা রাখেন।

রাঘবেন্দ্র বলেন, ‘প্রথম দিকে মানুষের হাতে হেলমেট তুলে দেওয়ার সময়ে তাঁরা কারণ জিজ্ঞাসা করতেন না। পেয়ে শুধু রেখে দিতেন। কিন্তু এই উদ্যোগ প্রাণ বাঁচাতে শুরু করার পর সেটা আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠল। মনে হলো, এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তারপর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সেই কাজ ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ জাগল। আমার বন্ধুকে হারানোর কারণে ভারতের সব নাগরিককে আমার বন্ধু বানিয়ে পথ দুর্ঘটনা মোকাবিলা করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে উঠল। গত ৯ বছরে আমি ২২টি রাজ্য ঘুরে হেলমেট বিতরণ করেছি।’

নিজের গাড়িতে অতিরিক্ত হেলমেট রাখেন রাঘবেন্দ্র। যাঁরা হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, তাঁদের থামিয়ে বিনা মূল্যে হেলমেট হাতে তুলে দিয়ে সড়কে নিরাপত্তার নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করেন।

এমনভাবেই হাতে হেলমেট পেয়েছেন মুস্তাফা খান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘হেলমেটম্যানের কাজের প্রশংসা করতে হয়। তাঁর উদ্যোগ অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাবে। তাঁদের পরিবারও নিরাপদ থাকবে।’

‘হেলমেটম্যান’ হিসেবে রাঘবেন্দ্র কুমার বলেন, ‘যখনই দেখি কারও হেলমেটের প্রয়োজন, আমি নিজের গাড়ি থেকে একটি হেলমেট নিয়ে তাঁদের দিয়ে দিই। কাউকে যেন মরতে না হয়। তাঁকে নিরাপদে বাসায় পাঠাতে পারলে নিজেকে সফল মনে করি।’