‘অর্থ লুটকারীদের’ শাস্তি দিতে চান মোদি, বিজেপিকে ‘বাংলাবিরোধী’ বললেন মমতা

কোচবিহারের দুই পৃথক জনসভায় ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে আজ বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি পৃথক জনসভায় যোগ দেন। দুপুরে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গার গুমানিরহাট উচ্চবিদ্যালয় ময়দানে জনসভা করেন মমতা। আর বিকেলে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানের জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

সভায় মোদির বক্তব্যের অনেকটা জুড়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা। স্বাভাবিকভাবে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সন্দেশখালীর নাম। জমি দখল, নারী ধর্ষণ, খুনসহ নানা অভিযোগ ওই এলাকার তৃণমূল নেতা শাহজাহান এখন গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন। সন্দেশখালীতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি হওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখন তাঁর বিরুদ্ধে ১২৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয়ের অভিযোগ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

সভায় মোদি বলেন, সন্দেশখালীর দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাবেনই। সারা জীবন জেলে কাটাতে হবে তাঁদের। তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের অর্থ যারা লুট করেছে, তারা রেহাই পাবে না, সাজা দেবই। দুর্নীতিবাজদের রেহাই নেই। দুর্নীতিবাজদের আমি পশ্চিমবঙ্গ থেকে হটাবই। আগামী পাঁচ বছর আমাদের লড়াই থাকবে এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে।’

মোদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এবার তৃণমূল ভোটদানে বাধা দিলে রুখে দাঁড়ান। মানুষ আপনাদের পাশে আছে। মনে রাখবেন, তারা চাঁদাবাজি, দুর্নীতি আর খুনের রাজনীতি করে। তাই তো তাদের ঘরে ঘরে টাকার পাহাড়। আমি বলি দুর্নীতি হটাও, তারা বলে দুর্নীতিবাজদের বাঁচাও।’ তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও পদক্ষেপ থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত করার আন্দোলন জারি থাকবে।’

মোদি আরও বলেন, তৃণমূল–বাম–কংগ্রেসের গড়া ইন্ডিয়া জোট মিথ্যার রাজনীতি করছে। সিএএ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদির গ্যারান্টি। যেখানে অন্যদের আশা শেষ, সেখানেই মোদির গ্যারান্টি শুরু।

বিজেপি সরকার ১০ বছরে ৩২ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে বলে দাবি করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘জনতার সেবক হয়ে আমি ১৪০ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমি বদ্ধপরিকর।’ মোদি এ কথাও বলেন, ‘অর্থনীতিতে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে আনতে হলে ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে একটি শক্তিশালী ও মজবুত সরকার গড়তে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এবারই আমরা এক শক্তিশালী সরকার গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৪০ কোটি মানুষের স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।’

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি এবার এ রাজ্যে এজেন্সি দিয়ে নির্বাচন করাতে চায়। আপনারা রুখে দাঁড়ান। আমরা মানছি না নির্বাচন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই, ইডি, আইটি এবং এনআইএর পাঁয়তারাকে। রুখে দাঁড়াতে হবে আপনাদের। মাথানত করবেন না এজেন্সির কাছে। বিজেপি বলছে—“ভোট দাও, এজেন্সি থেকে মুক্তি পাও”।’

মমতা আরও বলেন, তারা সংবিধান মানে না। আইন মানে না। তারা বাংলাবিরোধী। তারা চায় এক দেশ এক দল। বিজেপি এই কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি, সিবিআই, আইটি এবং এনআইএ দ্বারা হেনস্তা করছে। তাই তাদের কাছে মাথানত করবেন না। তাদের শিক্ষা দিন। রুখে দাঁড়ান।’ তিনি আরও বলেন, সেই ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা অত্যাচার চালাচ্ছে রাজ্যব্যাপী।

মমতা বলেন, ‘আমরা সিএএ, এনআরসি মানছি না। এ রাজ্যেও কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। আপনারা তো এ রাজ্যেরই নাগরিক। আবার কিসের নাগরিকত্ব? ওই নাগরিকত্বের ফরম পূরণ করলেই আপনারা ফের বাংলাদেশি হয়ে যাবেন। আর এ রাজ্যের কোনো আর্থিক কর্মসূচির আওতায় থাকতে পারবেন না। পাবেন না লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে এ রাজ্যের কোনো সুযোগ–সুবিধা। আপনারা হারাবেন নাগরিকত্ব।’