ইসির নোটিস পেয়েও নাড্ডার মুখে কংগ্রেসের ‘মুসলমানতুষ্টি’

বিজেপি সভাপতি জে ডি নাড্ডাফাইল ছবি: এএনআই

ধর্মীয় আবেগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বিজেপি সভাপতি জে ডি নাড্ডা আজ শুক্রবার আরও একবার কংগ্রেসের ‘মুসলমানতুষ্টি’ নিয়ে আক্রমণাত্মক হলেন। বললেন, কংগ্রেস ও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের গোপন ও অনুচ্চারিত লক্ষ্য তফসিল জাতি–উপজাতি, অনগ্রসর ও দরিদ্ররা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, মুসলমানরা যেন তা পায়। মুসলমানদেরও তাদের মতো সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা।

ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের মুসলমান তোষণনীতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। সে জন্য গতকাল বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিজেপি সভাপতিকে জবাবদিহির চিঠি পাঠিয়েছে। একই চিঠি তারা পাঠিয়েছিল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও, রাহুল গান্ধীর ভাষণ নিয়ে। অথচ নাড্ডা সেই চিঠি উপেক্ষা করে একই অভিযোগ জানালেন, যা বলার জন্য মোদির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে এবং যা আমলে নিয়ে ইসি নোটিস পাঠিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অন্যবারের মতো এবারও ক্ষমতাসীন থাকার ক্ষেত্রে বিজেপি হিন্দু-মুসলমান বিভাজনকেই আঁকড়ে ধরছে।

নাড্ডার বক্তব্য বিজেপি তার দলের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পুরোটাই প্রচার করেছে। তা দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে, কোনো জনসভা নয়, দলীয় দপ্তরে ওই ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সকালে প্রচারিত পাঁচ মিনিটের কিছু বেশি সময় ধরে সেই বার্তায় নাড্ডা মোদির কথাগুলোরই পুনরাবৃত্তি করেছেন, যা বিভিন্ন জনসভায় তিনি কদিন ধরে বলে আসছেন। মোদির মতো নাড্ডাও কংগ্রেসের ইশতেহারের উল্লেখ করেছেন। নাড্ডা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের অধিকার সর্বাগ্রে। তার মানে, ক্ষমতায় এলে ওরা (কংগ্রেস) গরিবদের সম্পত্তি কেড়ে মুসলমানদের দিয়ে দেবে। দলটির ইশতেহারে সে কথাই লেখা রয়েছে। আর মনমোহন সিং ওই কথা হুট করে বলেননি উল্লেখ করে নাড্ডা বলেন, কারণ, মুম্বাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরেও তিনি একই মন্তব্য করেছিলেন।

নাড্ডা এক ধাপ এগিয়ে আরও অভিযোগ করেন, মুসলমান তোষণ করতে গিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার সাচার কমিটিকেও ভুল তথ্য দিয়েছিল, যাতে প্রমাণিত হয় তফসিল জাতি–উপজাতি ও দলিতদের চেয়েও দেশের মুসলমানদের হাল খারাপ। তিনি বলেন, এটা তারা করেছিল যাতে মুসলমানদের তফসিল জাতিভুক্ত করা যায়। যাতে তারা তফসিলদের কোটা ও সংরক্ষণের সব সুযোগ পেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মুসলমানরাই যে অগ্রাধিকারী, সেটা নিশ্চিত করাই কংগ্রেসের লক্ষ্য।

মোদি যে প্রচারণা শুরু করেছেন, নির্বাচন কমিশনের আপত্তি সত্ত্বেও তা এই ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে নাড্ডা বুঝিয়ে দিলেন, হিন্দু-মুসলমান বিভাজনই তাদের অস্ত্র। প্রতিবারের মতো এবারও তারা সেই অস্ত্রের প্রয়োগ করবে। অন্যবারের মতো এবারও তারা নির্বাচনী লড়াইকে ‘৮০ বনাম ২০’ করতে চাইছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ৮০ বনাম ২০ তত্ত্বের প্রবক্তা। ২০১৭ ও ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি সরাসরিই বলেছিলেন, ২০ শতাংশ মুসলমানের একটি ভোটও তাদের প্রয়োজন নেই, যদি ৮০ শতাংশ হিন্দু তাদের পক্ষে থাকে।

নাড্ডার এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার নির্বাচন কমিশনের চিঠিকে বিজেপি মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। মোদির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস, সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) নালিশ করলেও এবং কমিশন জবাব চাইলেও নাড্ডা ও তাঁর দল ওই আক্রমণ থেকে পিছু হটবে না। ২৯ এপ্রিল নাড্ডা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুজনকেই নির্বাচন কমিশনের নোটিসের জবাব দিতে হবে। সেখানে নাড্ডা কোন যুক্তি দেখিয়ে মোদির মন্তব্যকে সমর্থন করেন, তা যেমন দেখার, তেমনই দেখার বিষয় কমিশন এই ভাষণকে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী বলে গণ্য করে কি না। ১০ বছর ধরে কমিশন একবারের জন্যও নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর কোনো মন্তব্য বা ভাষণ আপত্তিকর বলে মনে করেনি।