রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ভোট

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভার্চুয়্যালি বক্তব্য দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি : এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিল ভারত। গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ওই ভোটাভুটি হয়। এই ভোটের পর ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বদলেছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। খবর পিটিআই–এর।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করে। রাশিয়াকে নিন্দা জানাতে বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এর আগে জাতিসংঘে একাধিকবার ভোটাভুটি হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই দিল্লি ভোটদানে বিরত থেকেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিরাগভাজন হতে হয়েছে ভারতকে। ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিকসহ নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো। কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য ভারত রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। নয়াদিল্লি বারবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের পক্ষকে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়ে আসছে।

ভারত বর্তমানে দুই বছর মেয়াদের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। এ বছরের ডিসেম্বরে ওই মেয়াদ শেষ হবে। বুধবার ইউক্রেনের স্বাধীনতার ৩১তম বার্ষিকী ছিল। ওই দিনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছয় মাস পূর্তি ছিল। ওই দিন সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি এ নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণের বিরোধিতা ও উদ্বেগ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির অনুরোধ করেন।

তাঁর বক্তব্যের পর আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূত ফ্রেইত হোক্সা বক্তব্য দেন। এরপর নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটির মাধ্যমে জেলেনস্কির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ভোটে ভারতসহ ১৩টি দেশ জেলেনস্কির অংশগ্রহণের পক্ষে ভোট দেয়। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া বিপক্ষে ভোট দিলেও দেশটির মিত্র চীন ভোটদানে বিরত ছিল। রাশিয়া ও চীন ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

বৈঠকে নেবেনজিয়া যুক্তি দেন, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জেলেনস্কির অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছে না রাশিয়া। কারণ, এই রকম বৈঠকে তাঁর সশরীর উপস্থিত থাকা উচিত। করোনা মহামারির সময় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ভার্চ্যুয়ালি হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপর কাউন্সিল এখন আগের নিয়ম ফিরে এসেছে।

আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। দেশটির যে পরিস্থিতি তাতে প্রেসিডেন্টের সেখানে থাকা দরকার। এ পরিস্থিতির জন্য তিনি জেলেনস্কির ভিডিও কনফারেন্সে যোগদানের বিষয়টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্য সদস্যদেরও তিনি সমর্থন দেওয়ার কথা বলেন।

নেবেনজিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা নিয়ম মেনে চলার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমরা কিয়েভের পশ্চিমা সমর্থকদের যুক্তি বুঝতে পারছি।’

জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যদি এখনই মস্কোকে আটকানো না হয়, তবে রাশিয়ার সব খুনিরা অনিবার্যভাবে অন্যান্য দেশে হামলা করবে। ইউক্রেনের ভূখণ্ডে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হবে। আমাদের স্বাধীনতা আপনাদের নিরাপত্তা।’

জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ করেন। তিনি সেখান থেকে দ্রুত রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সতর্কতা বাতি জ্বলছে। তিনি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড অভিযোগ করেন, রাশিয়ার লক্ষ্য বরাবরের মতোই স্পষ্ট। ইউক্রেনকে ভূরাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ভেঙে ফেলা এবং বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা তাদের লক্ষ্য।