কেরালায় নিপাহ ভাইরাসের বাংলাদেশি ধরন ‘শনাক্ত’, ২ জনের মৃত্যু

সম্প্রতি কেরালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুই ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে
ফাইল ছবি: এএনআই

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালায় আবারও ‘নিপাহ ভাইরাস’ সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। গত দুই সপ্তাহে রাজ্যটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মসসুখ মান্ডবীয় গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ বুধবার কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ বিধানসভায় বলেছেন, কোঝিকোড় জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত আরও দুজন চিকিৎসাধীন।

বীনা জর্জ বলেন, বাংলাদেশে এই ভাইরাসের যে ধরন দেখা গেছে, কেরালার ধরনটিও তেমনই। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নিপাহ ভাইরাস তেমন একটা ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু মৃত্যুহার খুবই বেশি। ভাইরাসের প্রকোপ মোকাবিলায় একটি কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল কেরালায় পাঠানো হয়েছে।

গত ৩০ আগস্ট কেরালার কোঝিকোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুই ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা, ওই দুজনের মৃত্যুর কারণ নিপাহ ভাইরাস। সেই শঙ্কা যে সত্য, রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তা স্পষ্ট। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকার যৌথভাবে এর মোকাবিলায় নেমেছে। কোঝিকোড়ে কেরালা সরকার একটি কন্ট্রোল রুমও খুলেছে।

পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে থেকে একদল বিশেষজ্ঞ আজ কেরালায় যাওয়ার কথা। সেখানে তাঁরা বাদুড়ের ওপর গবেষণা করবেন। সংক্রমিত মানুষজনের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর হয়। সেই সঙ্গে মাথাব্যাথা, পেশির ব্যথা অনুভূত হয়। ক্রমেই সংক্রমণ ফুসফুসে ছড়ায়। বমি বমি, ঝিমুনিভাব ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। স্নায়ুতন্ত্রও আক্রান্ত হয়।

১৯৯৮-৯৯ সালে শূকরের খামার থেকে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাস প্রথমে ছড়িয়েছিল। তখন ভাইরাসে দেশ দুটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৬৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরে এই বাদুড়ের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কেরালায় নিপাহ ভাইরাসের যে বাংলাদেশি ধরন দেখা গেছে, সেটি তেমন একটা ছোঁয়াচে নয়। তবে ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। তাঁদের মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ওই ভাইরাসে ১১ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মারা যান আটজন।

সাধারণত বাংলাদেশে শীতকালে নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) রিপোর্ট অনুযায়ী, নিপাহর এই বাংলাদেশি ধরন সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে দেখা যায়।

কেরালায় নিপাহ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই বছর ২৩ জন সংক্রমিতের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ ও ২০২১ সালে আরও দুজন করে মারা যান।