হরিয়ানায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যোগীর বুলডোজার নীতি নিয়েছে প্রশাসন
বিজেপিশাসিত হরিয়ানা রাজ্যে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। সহিংসতাকবলিত এলাকা নুহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ‘বেআইনি ঝুপড়ি’ উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। সেই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বুলডোজার।
নুহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসন ২৫০টির বেশি ঝুপড়ি ভেঙে দিয়েছে। গৃহহীন কয়েক হাজার মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই মুসলমান।
জেলা পুলিশের দাবি, এসব ঝুপড়ি অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বসবাসকারীরা অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে চলে আসা মানুষ। নুহ ও গুরুগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাঁরাই ধর্মীয় শোভাযাত্রাকারীদের ওপর ইটবৃষ্টি করেছিলেন।
হরিয়ানার নুহ ও পার্শ্ববর্তী জেলা গুরুগ্রামে ছড়িয়ে পড়া হিংসাত্মক ঘটনায় মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেই ঘটনার জেরে আজ শুক্রবার গুরুগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ পড়া হয়নি। এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়, মসজিদ বা কোনো খোলা প্রান্তরে নামাজ না পড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যেন বাড়িতেই নামাজ আদায় করেন।
বেআইনি উচ্ছেদ ভাঙতে বুলডোজার সংস্কৃতি আমদানির কৃতিত্ব উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দুষ্কৃতকারী দমনে তিনিই প্রথম বুলডোজার ব্যবহার শুরু করেন। সিএএ ও এনআরসিবিরোধী বিক্ষোভ দাঙ্গার রূপ নেওয়ায় তিনি ব্রিটিশ আমলের ‘পিটুনি কর’ও রাজ্যে চালু করেছিলেন। যেসব দুষ্কৃতকারী ফেরার, তাঁদের তৈরি ঘরবাড়ি ভেঙে দিতে তিনি বুলডোজার চালানোর নির্দেশ দেন। প্রশাসনের যুক্তি, তাঁরা বেআইনি নির্মাণ ভাঙছে। ক্রমশই একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্যও ওই বুলডোজার নীতি গ্রহণ করতে থাকে।
হরিয়ানার নুহ ও তাউরুতে যেসব ‘অবৈধ স্থাপনা’ ভাঙা হয়, পুলিশের দাবি সেগুলো তিন বছর ধরে গড়ে উঠেছিল। প্রশ্ন উঠছে, এত বছর প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি? কেনইবা সংঘর্ষের পর তাঁরা সক্রিয়? এবং কেনইবা শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা?
যাঁদের ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে প্রচারের মধ্য দিয়ে উত্তেজনা ছড়াল, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। রাজস্থান পুলিশের কাছে ‘ফেরার’ মনু মানেসরকেও হরিয়ানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। অথচ ওই ব্যক্তির ভিডিওই উত্তেজনা ছড়িয়েছে ও হিংসায় প্ররোচনা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
দিল্লির লাগোয়া গুরুগ্রামেও এই উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে। তবে সেখানে বুলডোজার ব্যবহারের খবর এখনো নেই। গুরুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার মুসলমান ঝুপড়িবাসীদের স্থানীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই হুকুম মেনে কয়েক শ মুসলমান পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। তাঁদের অধিকাংশ গুরুগ্রামের অভিজাত হাউজিং সোসাইটিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুরুষেরা নানা রকম পেশায় যুক্ত থাকলেও নারীরা বেশির ভাগই সম্ভ্রান্ত পরিবারে গৃহকর্মের সঙ্গে যুক্ত।
দলে দলে গৃহত্যাগের ফলে বিভিন্ন সোসাইটিতে ঘর গেরস্থালির কাজে সংকট দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষীর কাজেও লোকাভাব দেখা দিয়েছে। গুরুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাছ–মাংসের সরবরাহ হয় নুহ থেকে। সংঘর্ষের পর সেই সরবরাহও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে।
গুরুগ্রাম হরিয়ানার প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সংঘর্ষের পর সেখানে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল অনিশ্চয়তা। সংঘর্ষের দিন নুহ জেলার পুলিশ সুপার বরুণ সিংলা ছুটিতে ছিলেন। তাঁকে বদলি করা হয়েছে। দায়িত্বে আনা হয়েছে ভিওয়ানি জেলার পুলিশ কর্তা নরেন্দ্র বিজারনিয়াকে। বেআইনি ঝুপড়ি উচ্ছেদ করছেন তিনিই।