আজহারউদ্দিন
ছবি: টুইটার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় গতকাল বুধবার একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়েছিলেন এক বন্দুকধারী। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি ৯ মিলিমিটার পিস্তল আর ২ বোতল অ্যাসিড। পায়ের গোড়ালির সঙ্গে বাঁধা ছিল একটি ছুরি। শ্রেণিকক্ষের ৭০ জন শিক্ষার্থী আর তাদের শিক্ষককে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এক নিরস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তার নৈপুণ্যে ওই বন্দুকধারী আটক হন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম আজহারউদ্দিন খান।

আজহারউদ্দিন উপপুলিশ সুপার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। দুই বছর আগে আজহার মালদহে বদলি হন। গতকাল বন্দুকধারী দেব কুমার বল্লভ (৪৪) শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার পর দাবি করেছিলেন, তাঁকে যেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে তিনি যেন তাঁর কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়া স্ত্রী ও সন্তানকে ফেরত চাইতে পারেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উপপুলিশ সুপার আজহারউদ্দিন বুঝতে পারলেন, বন্দুকধারী বল্লভ পোশাকধারী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন, কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলছেন।

এমন অবস্থায় আজহার উদ্দিন পুলিশের পোশাকটি খুলে ফেলে সাদামাটা পোশাক পরেন এবং সাংবাদিকদের ভিড়ে মিশে যান। একপর্যায়ে কোনো রকম অস্ত্র ছাড়াই বন্দুকধারী বল্লভকে ঝাপটে ধরেন এবং মাটিতে ফেলে দেন। পরে বল্লভকে আটক করা হয়।

নিমুয়া গ্রামের বাসিন্দা বল্লভ পেশায় কৃষক। পুলিশ সূত্র বলছে, অতীতেও অপরাধীর খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন বল্লভ। ২০২২ সালের জুনে পুলিশ, গণমাধ্যম ও তৃণমূলকে হুমকি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তাঁর কাছ থেকে বন্দুক ও বোমা উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই মামলায় জামিনে ছিলেন তিনি।

সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে বল্লভের স্ত্রী রিতা মুছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটে জয়ী হন। ২০২১ সালে রিতা দল ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে বল্লভের মানসিক অবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। একপর্যায়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান রিতা। গতকাল বল্লভ অভিযোগ করেন, লোকজন তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে দুজনের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল তৈরি করেছেন। স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানান তিনি।

আজহারউদ্দিন বলেন, ‘আমি দেখলাম, তিনি (বল্লভ) পুলিশকে দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছিলেন, তবে গণমাধ্যমে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। দ্রুত আমি পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে টি–শার্ট ও স্যান্ডেল পরে নিই। বেল্টও সরিয়ে ফেলেছিলাম।’

মালদহ পুলিশ সুপার যাদব বলেন, ‘এই ব্যক্তি আগেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ (গতকাল বুধবার) তাঁর কাছ থেকে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন, কীভাবে তিনি এসব অস্ত্র সংগ্রহ করলেন—এসব বিষয়সহ পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করব।’