পিডিপির একলা চলো নীতি, জামায়াত লড়বে স্বতন্ত্র হয়ে
এখন এটা স্পষ্ট যে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপিকে মোকাবিলায় ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), কংগ্রেস ও সিপিএমের জোটে পিডিপি যোগ দিচ্ছে না। পিডিপি নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আসন্ন বিধানসভা ভোটে ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মেহবুবা মুফতি গতকাল শনিবার দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। এ উপলক্ষে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দলের লক্ষ্য শুধু রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা নয়। তাঁরা চান, সংবিধানের খারিজ হওয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫ (ক) ধারা ফিরিয়ে আনতে। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধ থাকা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়া হিন্দুদের সম্মানের সঙ্গে ফেরত আনতে চান তাঁরা।
শ্রীনগরে দলীয় সেই অনুষ্ঠানে মেহবুবা মুফতি বলেন, তাঁর লক্ষ্য কাশ্মীর সমস্যার সমাধান। এনসি ও কংগ্রেস সেই লক্ষ্য সমর্থন করলে তিনি তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
মেহবুবা মুফতি বলেন, আসন সমঝোতার মাধ্যমে ভোটে লড়া তাঁর লক্ষ্য নয়। তিনি চান, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে।
মেহবুবা মুফতির এই পদক্ষেপের অর্থ, নির্বাচনের আগে তাঁর দলের সঙ্গে এনসি, কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট হচ্ছে না। আসন সমঝোতাও নয়। বোঝাপড়া কিছু হওয়ার থাকলে তা ভোটের ফল প্রকাশের পর।
কেন মেহবুবা মুফতি ওই জোটে গেলেন না, সেই ব্যাখ্যাও তিনি দেন। তিনি বলেন, এনসি-কংগ্রেস শুধু আসন সমঝোতা করেছে। তাদের বৃহত্তর কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। তুলনায় পিডিপি সব সময় বৃহত্তর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে। সাফল্য না এলেও লক্ষ্যচ্যুত হয়নি।
জোটবদ্ধ না হয়ে পিডিপি আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিজেপি অবশ্যই উৎসাহী হবে। কারণ, এতে উপত্যকার মুসলমান ভোট ভাগাভাগি হবে। মুসলমানপ্রধান কাশ্মীর উপত্যকার ১০ জেলায় বিধানসভার আসন রয়েছে ৪৭টি। হিন্দুপ্রধান জম্মুর ১০ জেলায় মোট আসন ৪৩টি। বিজেপি চায়, জম্মুর প্রতিটি আসন জিততে। সেই লক্ষ্যে বিধানসভার সীমানার পুনর্বিন্যাসও (ডিলিমিটেশন) করা হয়েছে, যাতে জম্মু এলাকা থেকে এনসি-কংগ্রেস আসন জিততে না পারে।
জম্মুর আসনগুলো নিশ্চিত করে বিজেপি চাইছে কাশ্মীর উপত্যকায় মুসলমান ভোটে বিভাজন ঘটাতে। পিডিপি জোটের শরিক না হওয়ায় সেই সুবিধে বিজেপি পাবে।
কিন্তু বিজেপি এটাও জানে, উপত্যকায় তাদের দলীয় প্রার্থীর জয় এককথায় অসম্ভব। সে কারণে তারা সাবেক পিডিপি নেতা আলতাফ বুখারিকে মদদ দিয়ে পিডিপি ও এনসি দলছুটদের নিয়ে ‘আপনি পার্টি’ তৈরি করেছে। ওই দলকে মদদ দিচ্ছে সাবেক কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের তৈরি ‘আজাদ পার্টি’ ও পিপলস কনফারেন্স দলের সাজ্জাদ লোন। পাশাপাশি চেষ্টা চলছিল জামায়াত-ই-ইসলামির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদেরও নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ করে দেওয়া। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের একাধিক বৈঠকও হয়েছিল।
কিন্তু বিজেপির একাংশের আপত্তির কারণে সেই প্রচেষ্টা আপাতত বানচাল হয়েছে। জামায়াতের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আরও ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তারা নতুন করে বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায়ও চলে এসেছে গত শুক্রবার থেকে। এই পরিস্থিতিতে জামায়াত নেতৃত্ব ঠিক করেছে, তাদের সাবেক নেতা ও সমভাবাপন্ন ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা ভোটে লড়বেন। জামায়াত নেতৃত্বের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই খবর দিয়ে বলেছে, সাবেক জামায়াত নেতারা উপত্যকার দশ-বারোটি আসন চিহ্নিত করেছেন, যেখানে তাঁদের সমর্থন আছে বলে ধারণা।
জামায়াত নেতাদের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ লোকসভা ভোটে বারামুলা কেন্দ্র থেকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতা ইঞ্জিনিয়ার রশিদের জয়। এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহকে এই বন্দী নেতা দুই লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন। উপত্যকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতলে বিজেপিরও সুবিধা। তারা মনে করছে, সে ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন সহজ হবে। সরাসরি জামায়াতের সমর্থন নিতে হবে না। বিরোধীদের সমালোচনার রাস্তাও বন্ধ করা যাবে।