ত্রিপুরা নির্বাচনে সিপিআইএম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনা বাড়ল

ত্রিপুরার আগরতলায় সংবাদ সম্মেলনে সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরি (বামে)।
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আসন্ন নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট (সিপিআইএম) এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় এ ইঙ্গিত দিয়েছেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরি।

গতকাল সিপিআইএমের দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা সিপিআইএমের সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীকে পাশে নিয়ে ইয়েচুরি বলেন, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ভোট লড়ার ব্যাপারে নীতিগত  আলোচনা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা বা আসন সমঝোতা নিয়েও কথাবার্তা আনুষ্ঠানিক স্তরে হয়নি বলেও তিনি জানান। তবে বিজেপিবিরোধী সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকে নিয়ে ত্রিপুরায় জোটের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গেও  বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একসঙ্গে লড়েছিল। তবে সেই নির্বাচনেও ভালোভাবেই জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

ত্রিপুরায় পরিস্থিতি আলাদা। সেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে বিজেপির অবস্থা সেখানে খুব একটা মজবুত নয় বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেবকে গত বছরে সরাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি।

নতুন দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসও সেখানে ঢুকেছে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শুরু করেছে, যদিও তারা এখনো স্থানীয় উপনির্বাচনে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।

অন্যদিকে, স্থানীয় জনজাতির দল হিসেবে তিপ্রা মথা দ্রুত উঠে এসেছে। ২০২১ সালে স্বশাসিত জনজাতি এলাকার নির্বাচনে জিতে তিপ্রা মথার নেতা ও রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যোৎ দেববর্মন অন্তত এক–তৃতীয়াংশ আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

এই অবস্থায় একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যদিকে সিপিআইএম, দুই দলই তিপ্রা মথার সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছে। তিপ্রা মথার সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে বলে জানিয়েছেন ইয়েচুরি।

তবে তিপ্রা মথার যে ‘গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের’ দাবি, তা যে সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব দাবি, তা–ও জানান তিনি। ত্রিপুরা নির্বাচনে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি আগেই প্রচারমধ্যমকে বলেছিলেন, ওই রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেস একটা জোটের দিকে এগোচ্ছে।

ইয়েচুরি সাংবাদিকদের বলেন, ত্রিপুরাসহ গোটা ভারতে বিজেপিকে রুখতে একটা সার্বিক জোটের প্রয়োজন আছে এবং ত্রিপুরায় সেই জোটের লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে লাগাতার  রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপরও আক্রমণ বেড়েছে।

জিতেন চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ বেড়েছে। খুন, চুরি বা অন্যান্য অত্যাচারের পাশাপাশি ত্রিপুরা এখন মাদক পাচারের করিডর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি এর সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজেপির স্থানীয় স্তরের নেতারা যুক্ত।’

ত্রিপুরায় যে কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের মধ্যে জোট হতে চলেছে, কিছুদিন আগে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির মানিক সাহা বলেছিলেন, এই জোট হলে বিজেপির জেতার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা তৈরি হবে। কারণ, মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে যে রাজ্যে বিজেপির বিরোধী শক্তি কারা।