স্কুলশিক্ষক প্রার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, কলকাতা শহরজুড়ে প্রতিবাদ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সল্টলেক, কলকাতা, ২১ অক্টোবর।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় কলকাতায় শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বাম দলগুলো প্রতিবাদ মিছিল করেছে। প্রতিবাদে মিছিল করেছে কলকাতার নাগরিক সমাজের ব্যানারে সর্বস্তরের মানুষজন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির শিক্ষক সংগঠনও কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

কলকাতার নাগরিক সমাজের ব্যানারে মিছিলে ছিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, মন্দাক্রান্তা সেন, চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত। মিছিলে ছিলেন বাম নেতা বিমান বসু, কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। সবাই প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন ২০১৪ ও ২০১৭ সালের চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরি দিচ্ছে না।

এর আগে পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে গত ১৭ অক্টোবর দুপুর থেকে কয়েক হাজার উত্তীর্ণ প্রার্থী কলকাতার সল্টলেকের করুণাময়ীর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দপ্তরের কাছে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই আন্দোলন রাতেই রূপ নেয় অনশন আন্দোলনে। সেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাঁদের নিয়োগ দেওয়া না পর্যন্ত অনশন আন্দোলন চলবে।

তবে আন্দোলনের রাশ টানতে রাজ্য সরকার ১৭ অক্টোবরই রাতে আন্দোলনস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরেও আন্দোলন চলতে থাকলে কলকাতা হাইকোর্ট এক নির্দেশে জানিয়ে দেন, আন্দোলনকারীদের ১৪৪ ধারা মেনে চালাতে হবে।
তবে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে অনশনকারীদের তুলে দেয় পুলিশ। এ সময় ধরপাকড়ের ঘটনাও ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার বাম দল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতা-কর্মীরা কলকাতার সল্টলেকের প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।

অন্যদিকে বিজেপির নেতারাও শুক্রবার কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। আর ধর্মতলায় প্রতিবাদ মিছিল করে কংগ্রেস। এরপর শনিবার কলকাতায় শনিবার বড় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হলো।
নিয়োগ হবে না, বিক্ষোভ চলবে

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এক ঘোষণায় বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের দাবি মানতে পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তাদের সবাইকে ফের চাকরির জন্য নতুন করে ইন্টারভিউ দিতে হবে। বিনা ইন্টারভিউতে কাউকে নিয়োগ করা হবে না।

তবে বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্য সরকার নতুন করে ১১ হাজার ৭৬৫ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তারা তা মানছেন না। তাদের বক্তব্য, যাঁরা ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং দুবার ইন্টারভিউতে অংশ নিয়ে পাশ করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে। নতুন করে আর ইন্টারভিউ দেবেন না তারা। সরকার যে নতুন করে ১১ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সেই বিজ্ঞপ্তি তারা মানছেন না। সাড়াও দেবেন না। জীবন গেলেও অনশনে লড়ে যাবেন।

যদিও এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালে সচিবালয় নবান্নে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে উত্তীর্ণ ২০ হাজার চাকরি প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১৬ হাজার ৫০০ এবং ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৫০০ উত্তীর্ণ প্রার্থী। কিন্তু কার্যত আর তা হয়নি। বরং স্কুল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ না করে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন অন্যদের। যদিও তিনি এ দুর্নীতিতে জড়িয়ে এখন গ্রেপ্তার হয়ে রয়েছেন কারাগারে।