দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিজেপিকে আক্রমণ খাড়গের

মল্লিকার্জুন খাড়গে
রয়টার্সের ছবি

কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে আজ বুধবার কংগ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। দায়িত্ব গ্রহণ করেই  বিজেপির ‘অপশাসনের অবসান’ ঘটানোর সংকল্প নিলেন তিনি। বললেন, ‘নতুন ভারতে’ এখন দিনভর মিথ্যার রমরমা। সর্বত্র হিংসা ও ঘৃণার বাতাবরণ। এই ভারতে গান্ধীজি খলনায়ক ও গডসে মহাপুরুষ। এই অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করা কংগ্রেসের অবশ্য কর্তব্য। নতুন সভাপতি সেই লড়াইয়ে দলের প্রত্যেকের সহযোগিতা চান।

নবনির্বাচিত সভাপতি বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আবেগপূর্ণ। অতি সাধারণ এক শ্রমিকের ছেলে হিসেবে জীবন শুরু করেছিলাম। সাধারণ কর্মী থেকে ব্লক সভাপতি হয়ে আজ দলের এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। কংগ্রেসের আদর্শ রক্ষাই জীবনের ধর্ম মেনেছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এমন এক ভারত গড়ার চেষ্টা করব, যেখানে সংবিধান সম্মান পাবে। প্রত্যেকে সমান অধিকার ও সুযোগ পাবে। সর্বস্তরীয় ঘৃণা দূর হবে। বেকারত্ব ঘুচিয়ে ও ক্ষুধা মিটিয়ে এমন এক উন্নত দেশ গড়ব, যেখানে হিংসার স্থান থাকবে না।’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, রাজস্থানের উদয়পুরে কংগ্রেস চিন্তন শিবিরের প্রস্তাব মেনে দলের সব পদের ৫০ শতাংশ ৫০ বছরের কম বয়সীদের জন্য সংরক্ষিত হবে।

দীর্ঘ ২০ বছর সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা সোনিয়া গান্ধী বুধবার থেকে ‘ভারমুক্ত হয়ে স্বস্তি বোধ’ করার কথা শোনান। নতুন সভাপতিকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমি নিতান্তই স্বস্তি বোধ করছি। আজ থেকে আমি ভারমুক্ত। ২০ বছর ধরে এই দায়িত্বে রেখে আপনারা আমাকে গৌরবান্বিত করেছেন। সম্মান দিয়েছেন। এই গর্ব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন জীবনের অঙ্গ। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সবার সামনে আসে। কংগ্রেসের সামনে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করার যে নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে, নতুন সভাপতির সঙ্গে সবাই একজোট হয়ে তার মোকাবিলা করব।’

খাড়গের অভিষেক পর্ব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ২৪ আকবর রোডে দলীয় সদর দপ্তরের লনে। সকাল থেকেই সেখানে মাইকে বাজানো হচ্ছিল গান্ধীজির প্রিয় ভজন। বেলা ১১টার সামান্য আগে খাড়গে এলেন। তাঁর আগেই উপস্থিত সোনিয়া গান্ধী, রাহুল–প্রিয়াঙ্কাসহ দলের অন্যান্য নেতা। গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরুর পর রাহুল এই প্রথম দিল্লিতে এলেন। মঞ্চে সোনিয়া, খাড়গে, নির্বাচন আধিকারিক মধুসূদন মিস্ত্রি ও এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের পাশাপাশি রাহুলও উপস্থিত ছিলেন। দীপাবলি, ভাইফোঁটা ও খাড়গের অভিষেক পর্বের দরুন ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার বিরতি দেওয়া হয়েছিল তিন দিন। বৃহস্পতিবার রাহুল আবার যাত্রা শুরু করবেন তেলেঙ্গানা থেকে।
খাড়গে তাঁর ভাষণে এই যাত্রার প্রসঙ্গও টানেন। বলেন, রাহুল প্রতিদিন বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন।

তাঁদের মতামত শুনছেন। এই যাত্রায় এমন বহু মানুষ ও সংগঠন যোগ দিয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন কংগ্রেসের সমালোচক ছিলেন। আজ রাহুল তাঁদের সংঘবদ্ধ করতে পেরেছেন। কংগ্রেস যে মূল্যবোধে বিশ্বাসী, তার সঙ্গে সহমত হয়ে তাঁরাও বিজেপির হাত থাকে দেশকে বাঁচাতে সচেষ্ট। খাড়গে বলেন, ভারত জোড়ো যাত্রা কংগ্রেসিদের মনে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে, এক নতুন উদ্যমের সৃষ্টি করেছে। তাঁদের সঙ্গী করে আরএসএস ও বিজেপির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে।

বুধবার খাড়গের দিন শুরু হয় রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে প্রার্থনা জানানোর মধ্য দিয়ে। এর পর তিনি যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর স্মৃতিসৌধে। সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী দলিত নেতা জগজীবন রামের স্মৃতিসৌধেও যান শ্রদ্ধা জানাতে। বিহারের এই দলিত নেতা ১৯৭০–৭১ সালে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। খাড়গে দ্বিতীয় দলিত নেতা, যিনি এই পদে আসীন হলেন।

কংগ্রেস সদর দপ্তরে অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে খাড়গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে যান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।