বিহারের রাজনীতিতে ওলটপালট

নিতীশ কুমার
ছবি: টুইটার

অষ্টমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) নেতা নিতীশ কুমার। গতকাল বুধবার রাজভবনে শপথ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হবে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আমি নই। তবে প্রশ্ন হলো, ২০১৪ সালে যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি কি ২০২৪ সালে তা হতে পারবেন?’

নিতীশের পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব।১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা শপথ নেবেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, নতুন মন্ত্রিসভায় আরজেডির ২০, জেডিইউর ১৩ থেকে ১৫ জন, কংগ্রেস ৪ ও হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চারও (হাম) একজন সদস্য থাকবেন।

বিহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে আচমকা ক্ষমতা হারানোর ধাক্কা সামলে বিজেপি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিপর্যয় নিয়ে মুখ না খুললেও তাঁদের নির্দেশে বিজেপির রাজ্য নেতারা নিতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যের নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, নিতীশ তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। সবাই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এদিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিতীশ বলেন, ‘আমি টিকব কি না, রাজ্যের মানুষই সেই উত্তর দেবেন।’

নিতীশকে আক্রমণ করেছেন একদা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা সুশীল মোদিও। নিতীশের ‘ক্ষমতালিপ্সু’ চরিত্র সম্পর্কে গতকাল তিনি বলেন, ‘উনি দেশের উপরাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে জেডিইউর কেউ কেউ তাঁর কাছে দরবারও করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নিতীশকে উপরাষ্ট্রপতি করে দিয়ে বিজেপি বিহার চালাক। সুশীল বলেন, ‘নিতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিহারি জনগণের রায়ের অবমাননা করেছেন। মানুষ এনডিএকে ভোট দিয়েছিল। সেই মর্যাদা নিতীশ রাখলেন না। এখন আমরাও দেখব, তেজস্বীকে সঙ্গে করে কীভাবে তিনি রাজ্য চালান। এই সরকারের মেয়াদ বেশি দিন নয়। লালু প্রসাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে নিতীশ আরজেডি ভাঙবেন।’

সংখ্যার বিচারে নতুন জোট সরকারের পতনের কোনো আশঙ্কা অবশ্য নেই। কারণ, ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় আরজেডির ৭৯, জেডিইউর ৪৫, কংগ্রেসের ১৯, হাম-এর ৪ জন ছাড়াও এই মন্ত্রিসভাকে সমর্থনের চিঠি দিয়েছে তিন বামপন্থী দলের ১৬ জন বিধায়ক। একমাত্র স্বতন্ত্র বিধায়কও সরকারের পক্ষে। এই সরকার সেই অর্থে প্রকৃত মহাজোট সরকার।

বিজেপির আশঙ্কাও এখানেই। জাতভিত্তিক এই রাজ্যে যাদব, কুর্মী, অনগ্রসরদের পাশাপাশি মুসলমান সমর্থন এক জোট হলে ভোটের বাক্সে তার বিপুল প্রতিফলন ঘটবে। বিহারে বিজেপি এখনো বর্ণহিন্দুদের দল বলে পরিচিত। বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হলে তাঁদের পক্ষে ভালো ফল করা কঠিন।

বিজেপির বেশি চিন্তা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট নিয়ে। এটা ঠিক যে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির সমকক্ষ এখনো কেউ নেই। কিন্তু বিজেপির একাংশ নিভৃত আলোচনায় এ কথাও স্বীকার করছেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির যে ভাবমূর্তি ছিল, এখন তা কিছুটা নিষ্প্রভ। বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। নিতীশ নতুন করে সে প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ক্ষতও টাটকা।

অর্থনীতির মন্দা কাটছে না। ‘অগ্নিপথ’ নিয়েও বিহারি মন ব্যাপক ক্ষুব্ধ। বিরোধীরা এভাবে এক জোট থেকে ২০২৪-এর নির্বাচনে লড়লে এসব বিষয়ের মোকাবিলা বিজেপিকে করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিজেপি নেতা বলেন, কাজটা খুবই কঠিন। তা ছাড়া বিহারের পটপরিবর্তন সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের পক্ষেও সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, এই পরিবর্তন ছোট কোনো রাজ্যে হলে বিজেপির এত চিন্তার কিছু ছিল না। রাজ্যটি বিহার। লোকসভার ৪০টি আসন রয়েছে এই রাজ্যে, ২০১৯ সালের ভোটে যার মধ্যে ৩৯টি জিতেছিল এনডিএ।

বিজেপির দ্বিতীয় চিন্তা রাজ্যসভা নিয়ে। পালাবদলের ফলে সংসদের উচ্চকক্ষে এনডিএর সমর্থন কমে যাবে। এই কক্ষে জেডিইউর সদস্য রয়েছেন ছয়জন। সমস্যা দেখা দিতে পারে ডেপুটি চেয়ারম্যান পদ নিয়েও। বিজেপির সমর্থনে এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন জেডিইউ সদস্য হরিবংশ নারায়ণ সিং। তিনি এখন কী করবেন, তা অজানা।