বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন না মমতা, কিসের বার্তা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দলের পক্ষ থেকে পাঠাচ্ছেন লোকসভার সদস্য কাকলি ঘোষদস্তিদারকে। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কিন্তু মমতা গিয়েছিলেন। এবার না যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিসের ইঙ্গিত?

আগামীকাল শনিবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে বেঙ্গালুরুতে সাজ সাজ রব উঠে গেলেও আগামী দিনের জোট রাজনীতির পক্ষে তা কতটা ইঙ্গিতবাহী, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে—তা নিয়ে আলোচনাও চলছে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধীর পাশে মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, চন্দ্রবাবু নাইডু, মায়াবতী, অজিত সিংয়েরা। রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা অজিত সিং মারা গেছেন। তাঁর তৈরি দল এখন অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির শরিক। মায়াবতী অনেক দিন ধরেই বিজেপি-বিরোধিতার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চন্দ্রবাবু নাইডুর অবস্থানও দৃঢ় নয়। সেই কারণে কংগ্রেস এই অনুষ্ঠানে মায়াবতী ও চন্দ্রবাবুকে আমন্ত্রণ জানায়নি। অখিলেশকে অবশ্যই বলা হয়েছে, কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তিনি কোনো সাড়া দিয়েছেন কি না, জানা যায়নি। কংগ্রেস থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কাশ্মীরের দুই দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপিকে। উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকদলের দুই নেতা অখিলেশ যাদব ও জয়ন্ত চৌধুরীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিহার থেকে আসার কথা জেডিইউ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের। তিন কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই, সিপিএম এবং সিপিআই (এমএল) আমন্ত্রিত হয়েছে। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও হাজির হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। মহারাষ্ট্র থেকে শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার উপস্থিত থাকবেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনকে ফোন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। থাকবেন তিনিও। সেই সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওই রাজ্যের এমডিএমকে ও ভিসিকে দলের নেতাদের। আর কেরালা থেকে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের। ওই রাজ্যের কেরালা কংগ্রেস, আইইউএমএল এবং বামপন্থী দল আরএসপিকেও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কংগ্রেস সভাপতি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন কি না, নিশ্চিত নয়। আপ-ও এই বিষয়ে নীরব।

ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে জোটে টানতে নীতীশ কুমার চেষ্টা করেছিলেন। সে জন্য নিজে ওডিশায় গিয়েও ছিলেন। কিন্তু তারপরই দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নবীন বুঝিয়ে দিয়েছেন, জোটে তিনি আগ্রহী নন। শুধু তা-ই নয়, গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, তাঁর আশা, বছর চারেক পর পুরীর বিমানবন্দর উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশরীর ওডিশা আসবেন; অর্থাৎ মোদিকেই তিনি প্রধানমন্ত্রী দেখতে আগ্রহী।

নবীন পট্টনায়ককে তাই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। একই রকম অনাহূত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিও। তেলেঙ্গানার শাসক দল বিআরএস কংগ্রেসের সঙ্গে সংসদীয় স্তরে আন্দোলনে অংশ নিলেও রাষ্ট্রীয় স্তরে জোটে আসতে রাজি হবে কি না, অনিশ্চিত। একই রকম অনিশ্চিত তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসও তাদের সঙ্গে হাত মেলাবে কি না, তা নিয়ে। তাদের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে কংগ্রেস নিরুত্তর।

তবে সমমনা দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে কংগ্রেস যে আগ্রহ দেখিয়েছে, সেই দলে অবশ্যই মমতা ও অখিলেশের স্থান রয়েছে। যদিও এই প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের অবস্থান ভিন্ন। কেজরিওয়ালকে নিয়েও কংগ্রেসে দ্বিমত রয়েছে।

মমতা ও অখিলেশ দুজনেই মনে করেন, লোকসভা ভোটে বিজেপিকে রোখার কৌশল হওয়া উচিত, যে আঞ্চলিক দল যে রাজ্যে শক্তিশালী, বিজেপিকে রোখার দায়িত্ব সেই রাজ্যে সেই দলকেই দেওয়া। যেমন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেস দায়িত্ব নিক যেসব রাজ্যে তারা শক্তিশালী।

জোট ফর্মুলা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত জোট প্রসঙ্গে খুব একটা এগোতে মমতা রাজি নন। তা ছাড়া কংগ্রেসের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীকে মেনে নিতেও তৃণমূল নেত্রীর আপত্তি প্রবল। এই দুই বিষয়ের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মমতা তাই নির্দিষ্টভাবে কোনো অবস্থান গ্রহণে অনিচ্ছুক। কংগ্রেসকে অবজ্ঞা নয়, আবাহনও নয়, এটুকু বোঝাতে বেঙ্গালুরুতে নিজে না গিয়ে কাকলিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত।    

পাঁচ বছর আগে বেঙ্গালুরুতে চাঁদের হাট বসেছিল। বোঝা যাচ্ছে, আগামীকালের জ্যোৎস্না অবশ্য সেবারের মতো উজ্জ্বল হবে না।