নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিফাইল ছবি: এএনআই

ধর্মের নাম করে বিজেপির হয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মামলা হলো দিল্লি হাইকোর্টে। মামলাকারী একজন আইনজীবী। নাম আনন্দ এস জোন্দালে। হাইকোর্টের কাছে তাঁর আবেদন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে প্রধানমন্ত্রীকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক। সেই মর্মে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে।

আবেদনে একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ধর্ম ও উপাসনালয়ের নামে ভোট না চাইতে আদালত প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিন। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইসি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, ৯ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের পিলিভিটে প্রধানমন্ত্রী এক নির্বাচনী জনসভায় ধর্মীয় আধারে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। সমাবেশে বলেছিলেন, তিনি রামমন্দির তৈরি করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের করতারপুর সাহিব (শিখধর্মের প্রথম গুরু নানকদেবের মৃত্যু হয়েছিল যেখানে) যাওয়ার জন্য করিডর তৈরি করে দিয়েছেন। গুরুদ্বারের লঙ্গরখানায় ব্যবহৃত বাসনপত্রের ওপর থেকে জিএসটি তুলে দিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে ‘গুরু গ্রন্থ সাহিব’ নিয়ে এসেছেন ভারতে। আইনজীবী আনন্দ জোন্দালের দাবি, এভাবে ধর্মের জিগির তুলে ভোট চেয়ে তিনি আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।

জোন্দালে তাঁর আবেদনে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু ধর্মের নামে ভোটই চাননি, মুসলমানদের হয়ে কথা বলার জন্য অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেছেন। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারণ, নির্বাচন ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারি বিমান ও হেলিকপ্টারে চেপে ঘুরে ঘুরে সর্বত্র এভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন।

আবেদনকারী এ কথাও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জাত ও ধর্মের আধারে ঘৃণা সৃষ্টির যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। অতএব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে সেই মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইন্দিরাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ইন্দিরা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ আদায় করেছিলেন। তারপর জারি করেছিলেন জরুরি অবস্থা।

ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আচরণবিধি অনুযায়ী ঠিক করে দেওয়া মাপের তুলনায় উত্তর প্রদেশে এক নির্বাচনী জনসভায় তাঁর মঞ্চের মাপ ছিল বড়। সেই জনসভায় বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। দুটিই আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী অন্যায়। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্মী যশপাল কাপুরকে পদত্যাগ না করিয়ে তাঁকে ইন্দিরার নির্বাচনী এজেন্ট করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল। অন্যতম নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা তা যুক্তিপূর্ণ মনে করলেও বাকি দুই সদস্য তা মনে করেননি। লাভাসা তাঁর আপত্তি নথিভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু কমিশন মোদি ও শাহকে অপরাধী মনে করেনি। লাভাসা তারপর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়ে কমিশন ছেড়ে চলে যান। তারপর তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও বোনের বিরুদ্ধে আয়কর ও ইডি তদন্ত শুরু করছিল।