গঙ্গায় পদক বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন ভারতের কুস্তিগিরেরা

নয়াদিল্লির যন্তর মন্তর থেকে গত রোববার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কুস্তিগির বিনেশ ফোগাতকে আটক করেন
ছবি: এএনআই

হেনস্তার প্রতিকারে সরকারি ঔদাসিন্যের প্রতিবাদে হরিদ্বারের গঙ্গায় দেশের সেরা কুস্তিগিরেরা তাঁদের সব পদক বিসর্জন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেজন্য আজ মঙ্গলবার তাঁরা উত্তরাখন্ডের পবিত্র শহর হরিদ্বারের উদ্দেশে রওনাও হয়েছিলেন। তবে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতা নরেশ তিকাইত তাঁদের কাছ থেকে পদক রেখে দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, দাবি আদায়ের তাঁরাও কুস্তিগিরদের সঙ্গে মাঠে নামবেন। পাঁচ দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে তাঁরা পদক বিসর্জন দিতে পারবেন।

গত ২৩ এপ্রিল থেকে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে জয়ী বিনেশ ফোগাত, সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ পুনিয়াদের মতো কুস্তিগিরেরা দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলনে বসেছিলেন। এটা ছিল তাঁদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। তাঁদের অভিযোগ কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি উত্তর প্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন তিনি নাকি নারী কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তা করে চলেছেন। এক নাবালিকাসহ সাত নারী কুস্তিগির এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেও সরকার তাঁকে ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করেনি। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত জানুয়ারিতে ফেডারেশনের সভাপতিকে অপসারণের দাবিতে প্রথমবার আন্দোলন শুরুর পর কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে ধরনা প্রত্যাহার করলেও গত চার মাসে সরকার কিছুই করেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। ফলে গত ২৩ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফার ধরনা শুরু করেন তাঁরা। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর করে। কিন্তু আজও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সরকারও গত এক মাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

এ অবস্থায় গত রোববার নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন কুস্তিগিরেরা মিছিল করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। জবরদস্তি করে গ্রেপ্তার শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশ যন্তর মন্তরের ধরনাস্থল ভেঙে দিয়ে তাঁদের জানিয়ে দেয়, আর কখনো তাঁদের সেখানে ধরনার অনুমতি দেওয়া হবে না।

এর আগে পরিকল্পনা ছিল, আজ গঙ্গায় পদক বিসর্জন দিয়ে কুস্তিগিরেরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে ইন্ডিয়া গেটের সামনে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন।

আজ মঙ্গলবার সাক্ষী মালিক দুটি টুইট করেন। একটিতে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও চেন্নাই সুপার কিংসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কটাক্ষের সুরে তিনি লেখেন, ‘দেখে ভালো লাগছে যে কোনো ক্রীড়াবিদ এখনো সম্মান পাচ্ছেন। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’

পরের টুইটের সঙ্গে সাক্ষী মালিক এক দীর্ঘ চিঠি জুড়ে দেন, যাতে লেখা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের গলায় ঝোলানো এসব পদক আজ অর্থহীন হয়ে গেছে। একবার ভেবেছিলাম এই পদক ফিরিয়ে দিই। কিন্তু কাকে দেব? রাষ্ট্রপতিকে? তিনি তো নারী? আমাদের কীভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে, তা তো তিনি মাত্র দুই কিলোমিটার দূর থেকে দেখলেন? একটা কথাও তো বললেন না? তাঁর কাছে পদক ফেরত দেওয়া যায়?’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কুস্তিগিরেরা লিখেছেন, ‘একবারের জন্যও তিনি আমাদের কথা শুনলেন না। বরং নতুন সংসদ ভবনে আমন্ত্রণ জানালেন আমাদের অত্যাচারীকে। ছবি তুললেন। তাঁর ধবধবে সাদা পোশাকের বিচ্ছুরণ আমাদের বিদ্ধ করছিল। ওই পোশাকে তিনি বোঝাচ্ছিলেন, “আমিই আইন, আমিই নিয়ম, আমিই সিস্টেম।”’

কুস্তিগিরেরা লিখেছেন, ‘এই পদকের আর কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের গলায় এটা ঝুলিয়ে দিয়ে তারা আমাদের শোষণ করে। প্রতিবাদী হলে কারাগারে ভরে দেয়। রাষ্ট্র ও পুলিশ আমাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো ব্যবহার করছে আর প্রকৃত অপরাধী জনসভায় আমাদের গালমন্দ করে চলেছেন। মনে হচ্ছে, এ দেশে আমাদের জন্য কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’

কুস্তিগিরেরা আরও লিখেছেন, ‘পবিত্র গঙ্গাই এসব পদকের উপযুক্ত স্থান। এসব পদক গঙ্গাতেই বিসর্জন দেব।’

ইতিমধ্যে আজ মঙ্গলবার কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংযুক্ত কিষান মোর্চা বলেছে, কুস্তিগিরদের সমর্থনে মোর্চা ১ জুন থেকে সারা দেশে গণ–আন্দোলন শুরু করবে। ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের যাবতীয় কুকীর্তি ফাঁস করবে। ৫ জুন তারা পরবর্তী আন্দোলনের কথা জানাবে।

হরিদ্বারের পুলিশ সুপার অজয় সিং বলেছেন, কুস্তিগিরেরা গঙ্গায় পদক বিসর্জন দিতে চাইলে তিনি তাঁদের বাধা দেবেন না। বাধা দেওয়ার কোনো হুকুমও তিনি ওপর মহল থেকে পাননি।