পাকিস্তান চুড়ি পরে বসে নেই: কাশ্মীর নিয়ে রাজনাথের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফারুক আবদুল্লাহ

রাজনাথ সিং ও ফারুক আবদুল্লাহছবি: এএনআই

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ও জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উদ্দেশে বলেছেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা সফল করে দেখান। তবে সেই সঙ্গে তিনি তাঁকে এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান হাতে চুড়ি পরে বসে নেই। তাদের হাতে পারমাণবিক বোমা রয়েছে, তা ব্যবহার করলে সেটা পড়বে ভারতেই।

রাজনাথ সিং গতকাল রোববার পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে নির্বাচনী জনসভায়ও তিনি ওই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘ভারতের শক্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে। গোটা বিশ্বে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে অতি দ্রুত। জম্মু–কাশ্মীরের উন্নতি হচ্ছে সর্বস্তরে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে আমাদের ভাইবোনেরা তা দেখছেন। এই প্রগতি ও অগ্রগতি দেখে তাঁরা নিজেরাই চাইবেন ভারতে চলে আসতে। ভারতকে বলপ্রয়োগ করতে হবে না।’

রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর আমাদের ছিল, আছে, থাকবে।’

ফারুক আবদুল্লাহকে গতকালের রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন বলছেন, তখন তাঁর তা করে দেখানো উচিত। তাঁকে বাধা দেওয়ার তো কেউ নেই? তবে তাঁর মনে রাখা উচিত, পাকিস্তান হাতে চুড়ি পরে বসে নেই। তাদের হাতে পারমাণবিক বোমা আছে। এবং তেমন হলে দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেটা আমাদের ওপরেই পড়বে।’

ভোট আবহে পাকিস্তান, সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সব সময়েই প্রচারের অংশ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বিজেপি নেতারা জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে এগুলো তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও গতকাল ওডিশার কটকে এক আলাপচারিতায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সম্পর্কে বলেন, ‘ওই ভূখণ্ড ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় সংসদে এ নিয়ে একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছিল। একটা সময় মানুষ এটা ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তা চেতনার অংশ।’

অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও কী করে পাকিস্তান তা কবজা করল জানতে চাওয়া হলে জয়শঙ্কর প্রকারান্তরে দায় চাপিয়ে দেন কংগ্রেসের ওপর। তিনি বলেন, ‘বাড়ির মালিক দায়িত্বশীল না হলে চোরেরা চুরি করবেই। এখানে অন্য দেশ সেই ভূমিকা নিয়েছে। দখল করেছে।’

পুঞ্চ হামলা পরিকল্পিত স্টান্ট: চান্নি

জম্মু–কাশ্মীরের পুঞ্চের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাকে পাঞ্জাবের সাবেক কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি ‘পূর্বপরিকল্পিত স্টান্টবাজি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের মুখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইচ্ছা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

গত শনিবার পুঞ্চে বায়ুসেনার এক বহরে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তাতে পাঁচ কর্তা গুরুতর আহত হন। পরে একজনের মৃত্যু হয়।

সেই হামলা নিয়ে চান্নি বলেন, ‘এটা কোনো জঙ্গি হামলা নয়। পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত স্টান্টবাজি। ভোট এলেই বিজেপি জয় নিশ্চিত করতে এই কাজ করে। মানুষকে মেরে মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করতে বিজেপি ভালোই জানে।’

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় এক বিস্ফোরণে ৪০ জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেও এমন ধরনের চর্চা হয়েছিল। পুলওয়ামার জবাব ভারত দেয় বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে, তা নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। যদিও বিজেপির আসন বৃদ্ধি ঘটেছিল।

পরে জম্মু–কাশ্মীরের সেই সময়কার রাজ্যপাল ও বিজেপি নেতা সত্যপাল মালিক অভিযোগ করে বলেছিলেন, কেন্দ্রের গাফিলতিতেই ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল।

চান্নি পাঞ্জাবের জলন্ধর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর এই মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। গতকাল পাঞ্জাবে ভোটের প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, তা হলে কি ধরে নিতে হবে ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধও কংগ্রেস ভোটে জেতার জন্য করেছিল?

অনুরাগ ঠাকুর বলেন, চান্নির মন্তব্যের জন্য কংগ্রেসের ক্ষমা চাওয়া উচিত।