মুইজ্জুর কোনো মন্ত্রীর প্রথম দিল্লি সফর, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা

নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির। ৯ মেছবি: এএনআই

অবাঞ্ছিত মন্তব্য ও আচরণ যাতে সম্পর্কহানির কারণ না হয়, সে জন্য সরকারের সচেষ্ট থাকার কথা জানিয়ে দিলেন মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির। মন্ত্রী হিসেবে প্রথম ভারত সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে মুসা জমির বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর দেশের কয়েকজন মন্ত্রীর মন্তব্য কোনোভাবেই সরকারি মনোভাব ছিল না।

নির্বাচনের পর মালদ্বীপের কোনো মন্ত্রীর এটাই প্রথম ভারত সফর। সেই সফরে এসে মুসা জমির বলেন, তাঁদের সরকার কখনো সাবেক মন্ত্রীদের ওই মন্তব্য সমর্থন করেনি। এমন অবাঞ্ছিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত যথোচিত ব্যবস্থাও নিয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এমন না করেন, সে জন্য সরকার সচেষ্ট।

মুসা জমির বলেন, সে সময় কী ঘটেছিল, তা দুই দেশের সরকারই বুঝে গেছে। সেই পর্ব অতীত। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

মুইজ্জু সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর মালদ্বীপের সঙ্গে হঠাৎ ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। লাক্ষাদ্বীপ সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর মালদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রী মোদি সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মালদ্বীপবিরোধী প্রচার তীব্রতর হয়ে উঠেছিল।

ভারতীয় পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপের আকর্ষণ ক্রমেই বেড়েছে। ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে। কিন্তু মন্ত্রীদের অবাঞ্ছিত মন্তব্যের পর ক্ষুব্ধ ভারতীয়রা মালদ্বীপ সফর বর্জন করতে থাকেন। তাতে দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুইজ্জু সরকার পরিস্থিতির বদল ঘটাতে সচেষ্ট হয়। তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়।

মুসা জমির তাঁদের সরকারের সেই পদক্ষেপের কথা জানিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে তাঁরা আন্তরিকভাবেই আগ্রহী। ভারতীয় পর্যটকেরা যাতে মালদ্বীপে ফেরত আসেন, সেই অনুরোধও তিনি করেন।

একই অনুরোধ জানিয়েছিলেন মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সালও। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় পর্যটকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা মুখ ঘুরিয়ে থাকবেন না। ভুল বুঝবেন না। মালদ্বীপ আপনাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’

দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটায় সে দেশে যাওয়া ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা ৪২ শতাংশ কমে গেছে।  

ভারতবিরোধী প্রচার চালিয়ে মালদ্বীপে মুইজ্জু সরকার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী ভারতকে ছেড়ে তারা চীনের ওপর বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছে। পররাষ্ট্রনীতিতে এই বদল ঘটার ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও যথেষ্ট অবনতি ঘটে। মুইজ্জুর দাবি মেনে সে দেশে অবস্থানরত ৮৮ ভারতীয় সেনা সদস্যকে ফেরত আনা হয়েছে।

ওই ভারতীয় সেনা সদস্যরা মালদ্বীপকে দেওয়া একটি ডর্নিয়ার বিমান ও দুটি হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। ওই বিমান ও হেলিকপ্টার অসুস্থ রোগীদের নিয়ে আসা, দুর্যোগের সময় ত্রাণ বণ্টনের মতো কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সে দেশে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের কাজ এখন থেকে করবেন ভারতীয় প্রযুক্তিবিদেরা। সম্পর্কের এই টানাপড়েনের মধ্যে মুসা জমিরের সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আসরে সফররত অতিথিকে ‘উষ্ণ অভ্যর্থনা’ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে ও সেই লক্ষ্যে আগামী দিনের রূপরেখা তৈরিতে সাহায্য করবে। মালদ্বীপ ভারতের ঘনিষ্ঠ ও নিকটতম প্রতিবেশী। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক স্বার্থ ও সংবেদনশীলতা। তাঁর আশা, এই বৈঠক বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গির সামঞ্জস্য রক্ষায় সমর্থ হয়েছে।

ভারতের প্রতিবেশী নীতি কীভাবে ও কতটা মালদ্বীপের ক্ষেত্রে সার্থক, সে বিষয়টিও জয়শঙ্কর তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মালদ্বীপের উন্নয়নে ভারত বরাবর সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প সে দেশের মানুষের উপকার করেছে। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। খুবই সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তাও করেছে। যেকোনো প্রয়োজনে সবার আগে ভারত হাজির হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়। তবে ভোট পরবর্তী সময়ে কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কেউই প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।