রাহুলের বক্তব্য ঘিরে কেন তৎপর দিল্লি পুলিশ
ভোটমুখী রাজ্য কর্ণাটকে বিজেপির ‘অপশাসনের’ অবসান ঘটিয়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনতে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ সোমবার দক্ষিণ ভারতের বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে তিনি বলেন, ক্ষমতায় কংগ্রেস আসছেই। ক্ষমতাসীন হলে কংগ্রেস ৫ বছরে রাজ্যে ১০ লাখ বেকারকে চাকরি দেবে। প্রতিটি খালি সরকারি পদে লোক নিয়োগ করবে।
রাহুল বলেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রার সময় আমি দেখেছি, বিজেপির ৪০ শতাংশ ঘুষখোর সরকার’ কীভাবে রাজ্যটাকে ছারখার করে দিয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের হতাশার দিকে না তাকিয়ে দেদার লুট করে গেছে। কংগ্রেস এই সার্বিক হতাশা দূর করবে। বেকারত্বের জ্বালা ঘোচাবে।’
কর্ণাটকে ক্ষমতাসীন থাকতে মরিয়া বিজেপি ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সফর করেছেন। এবার শুরু করল কংগ্রেস রাহুলকে এনে। ইদানীং রাহুল সেভাবে কোনো রাজ্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেননি। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা চলাকালে একবার শুধু গুজরাটে গিয়েছিলেন। হিমাচল প্রদেশে যাননি। যাত্রা শেষে ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড রাজ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও প্রচারের যাননি তিনি। এক দিনের জন্য শুধু গিয়েছিলেন মেঘালয়ে।
আজ সোমবার কর্ণাটকের বেলাগাভিতে দলীয় সমাবেশে রাহুল বলেন, ‘আমি রাজ্যের প্রতিটি জেলায় যেতে তৈরি। যাঁরা আমাকে চাইবেন, আমি হাজির হব। আমাদের লক্ষ্য বিজেপির অপশাসনের হাত থেকে কর্ণাটককে রক্ষা করা।’ রাহুলের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মনে করা হচ্ছে, ভোট রাজনীতি নিয়ে তাঁর মনের দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ও জড়তা সম্ভবত কেটে গেছে।
কংগ্রেসের কাছে বেকারত্ব এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। কর্ণাটকের বেকারত্ব ঘোচাতে কংগ্রেস তাই রাহুলকে দিয়ে ‘যুব নিধি’ প্রকল্প চালু করে। রাহুল বলেন, ক্ষমতায় এসেই সারা রাজ্যে প্রথম দিন থেকে এই প্রকল্প চালু করা হবে। প্রকল্প অনুযায়ী প্রত্যেক বেকার স্নাতককে পরবর্তী দুই বছরের জন্য মাসে তিন হাজার রুপি দেওয়া হবে। ডিপ্লোমাধারী বেকারদের দেওয়া হবে মাসে দেড় হাজার রুপি।
দিল্লি ছেড়ে কর্ণাটকে যাওয়ার আগের দিন গতকাল রোববার রাহুলের বাড়ি যায় দিল্লি পুলিশ। ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালে শ্রীনগরে তিনি বলেছিলেন, পদযাত্রার সময় বহু নারী তাঁর কাছে এসে বলেছিলেন, তাঁদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বলেছিলেন, সামাজিক লজ্জা ও নাম জানাজানির ভয়ে তাঁরা পুলিশকে কিছু জানাতে চান না।
সেসব নারী কারা, দিল্লি পুলিশ হঠাৎই তা জানতে উদ্যোগী। তারা রাহুলকে নোটিশ পাঠায় ১৬ মার্চ। ১৯ মার্চ দিল্লি পুলিশের পদস্থ কর্তারা রাহুলের দিল্লির সরকারি বাসভবনে যান তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। এই তৎপরতায় বিস্মিত কংগ্রেস নেতা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ৪ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে ১০টি বিষয়ের উল্লেখ করে জানতে চান, শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক নিয়ে সংসদের ভেতর ও বাইরে তাঁরা যেসব দাবি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা সম্পর্কযুক্ত কি না।
সূত্র অনুযায়ী, চিঠিতে রাহুল লিখেছেন, আশা করি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু শ্রীনগরে বলা কথার ৪৫ দিন পর পুলিশ কেন এত আগ্রহী, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় ঝরে পড়ছে।
ভারত জোড়ো যাত্রা ১২টি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অতিক্রম করেছিল। কোনো রাজ্য পুলিশ রাহুলের কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতে চায়নি। কেন তবে দিল্লি পুলিশের এই আগ্রহ? দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে? রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন উঠেছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজেই সেই প্রশ্ন তুলে টুইটে লিখেছেন, ‘মোদিজির পরম মিত্রকে বাঁচাতে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। ঘটনার ৪৫ দিন পর রাহুলের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো লজ্জাজনক পদক্ষেপ।’
রাহুল অন্য রাজ্যের নারীদের নাম জানালে দিল্লি পুলিশ কী করতে পারে, সে প্রশ্নও উঠছে। কারণ, দিল্লির বাইরে দিল্লি পুলিশের কিছু করার এখতিয়ার নেই। দিল্লি পুলিশও এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
দিল্লি পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা নজরে পড়ার আরও কারণ, দেড় বছর আগে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া হিন্দু ধর্ম সংসদে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশকে সে জন্য ভর্ৎসনাও করেছেন। দিল্লি দাঙ্গার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেও তাদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে। প্রমাণের অভাবে একের পর এক গ্রেপ্তার ব্যক্তি ছাড়া পেয়েছেন। এই নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি ভিন রাজ্যে বলা রাহুলের মন্তব্য নিয়ে দিল্লি পুলিশের অতি উৎসাহ এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকেই বড় করে তুলে ধরছে।