বিমানবন্দরে ১০ মিনিট, আকাশে ১২ মিনিট—‘ভারতের রাজকুমারের’ শেষ দিন কী ঘটেছিল

সঞ্জয় গান্ধী ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ও বিমান চালনায় দক্ষ ছিলেন। কিন্তু নয়াদিল্লিতে স্টান্ট বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ হারান। জীবনে তিনবার হত্যাচেষ্টার ছায়া, বিতর্কিত সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ এবং ক্ষমতার প্রতি আকর্ষণ ইতিহাসে এক রহস্যময় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে তাঁকে। আজ ১৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিনে তরুণ এই রাজনীতিবিদের ঘটনাবহুল জীবনের আলোচিত কিছু দিক সম্পর্কে জানা যাক।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর ছেলে সঞ্জয় গান্ধী। নয়াদিল্লি, ভারত, ২১ মার্চ ১৯৭৭ফাইল ছবি: এএফপি

১৯৮০ সালের ২৩ জুন, নয়াদিল্লি। সকালটা ছিল শান্ত, তবু ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়ের সূচনা হয়। ভারতের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে, সাবেক কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী মাত্র ৩৩ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর এমন মৃত্যু একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের শুধু শোকের ঘটনাই নয়; বরং ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে বিতর্ক, ষড়যন্ত্র ও রহস্যের গভীর অধ্যায় হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে আছে।

সঞ্জয় গান্ধীর জীবন ছিল রাজনৈতিক উত্থান-পতনের এক মেলবন্ধন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার আগে তিনি একাধিকবার হত্যাচেষ্টারও শিকার হন। কিন্তু কীভাবে ঘটেছিল রহস্যেঘেরা সেই বিমান দুর্ঘটনা? রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও অনেক সাধারণ মানুষের কাছে আজও এটি কৌতূহলী এক প্রশ্ন।

সঞ্জয় গান্ধী জন্মগ্রহণ (১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৬) করেন ভারতের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে। প্রপিতামহ মোতিলাল নেহরু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। নানা জওহরলাল নেহরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। মা ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী (১৯৬৬-৭৭ ও ১৯৮০-৮৪)। ভাই রাজীব গান্ধী পরে প্রধানমন্ত্রী হন। সঞ্জয়কে ব্যাপকভাবে তাঁর মায়ের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে মনে করা হতো।

সঞ্জয় গান্ধীর সবচেয়ে সমালোচিত পদক্ষেপ ছিল ‘স্টপ অ্যাট টু’ নামে জন্মনিয়ন্ত্রণ অভিযান। লক্ষ্য ছিল, ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে ৬ মিলিয়নেরও (৬০ লাখ) বেশি পুরুষকে জোর করে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। এ অভিযান ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

সঞ্জয় পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। তবে ছোটবেলা থেকেই মনোযোগ ছিল প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ওপর। ইংল্যান্ডে রোলস-রয়েস প্রতিষ্ঠানে তিনি অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭৬ সালে পাইলট হিসেবে লাইসেন্স নেন এবং অ্যারোবেটিক চালনায় তাঁর দক্ষতা ছিল। এ আগ্রহ তাঁর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উইকিলিকসের নথি অনুযায়ী, ইন্দিরা গান্ধী ছেলে সঞ্জয়কে কখনো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দেখেননি। তিনি শুধু ‘ছোট কর্মী’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছিলেন। তবু জরুরি অবস্থার সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এবং কংগ্রেসের ভেতরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার দায়িত্ব সঞ্জয়ের হাতে ছিল।

রাজনৈতিক উত্থান ও বিতর্কিত ভূমিকা

দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ১৯৭৫ সালের জুনে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এরপর সঞ্জয় গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। জরুরি অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী নাগরিক অধিকার স্থগিত করেন এবং হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় সঞ্জয় মায়ের প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা নেন এবং ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। এক মার্কিন সাংবাদিক তাঁকে সরকারের ‘জাতীয় প্রধান তত্ত্বাবধায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ওই সময় (জুন ১৯৭৫-মার্চ ১৯৭৭) নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা আরও দৃঢ় করতে বেশ কিছু বিতর্কিত নীতি গ্রহণ করেন তিনি।

সঞ্জয় গান্ধীর সবচেয়ে সমালোচিত পদক্ষেপ ছিল ‘স্টপ অ্যাট টু’ নামে জন্মনিয়ন্ত্রণ অভিযান। লক্ষ্য ছিল, ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে ৬০ লাখের বেশি পুরুষকে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। এ অভিযান ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। কারণ, বহু ক্ষেত্রে জোর করে পুরুষদের বন্ধ্যাকরণ করা হয়। পুলিশ অনেক গ্রাম ঘিরে ফেলত এবং দরিদ্র পুরুষদের ধরে এনে বন্ধ্যাকরণ করানো হতো।

‘স্টপ অ্যাট টু’ ছিল সঞ্জয় গান্ধীর পাঁচ দফা কর্মসূচির একটি। অন্য চারটি ছিল গাছ লাগানো, সাক্ষরতা বাড়ানো, যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই ও বর্ণব্যবস্থার বিলুপ্তি।

শেষ পর্যন্ত টিডিকে-কে (সোনিয়া গান্ধীকে বোঝাতে ব্যবহার করা সংক্ষিপ্ত শব্দ) সুবিধা দেওয়ার জন্য সোভিয়েতরা তাঁর (সঞ্জয় গান্ধী) বিমানে একটি ফাটল তৈরি ও জীবন শেষ করে। বিমানটি আশোকা হোটেলের কাছে বিধ্বস্ত হয়, কিন্তু বিস্ফোরিত হয়নি। কেন?
সুব্রামানিয়াম স্বামী, বিজেপির রাজ্যসভার সাবেক সদস্য

সঞ্জয়ের আরেকটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ছিল ভিড়ভাট্টা ও দরিদ্র মানুষের বসতি উচ্ছেদ। কিছু এলাকাকে নগর উন্নয়নের পথে বাধা মনে করতেন তিনি। ফলে পুরোনো দিল্লির বহু বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন, যার মধ্যে জামা মসজিদ ও তুর্কমান গেটের এলাকাগুলোও ছিল।

দিল্লিই ছিল এসব উচ্ছেদের প্রধান কেন্দ্র, তবে গুজরাট, হরিয়ানাসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে একই ধরনের অভিযান চালানো হয়। তুর্কমান গেটে উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত হন। মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা অজানা। ১৯৭৭ সালে গঠিত শাহ কমিশন (জাস্টিস জে সি শাহ কমিশন অব এনকোয়ারি) জানায়, সেখানে অন্তত ৬ থেকে ২০ জন নিহত হয়েছিলেন। পুরো অভিযানের ফলে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। শাহ কমিশন এ উচ্ছেদ অভিযানকে জরুরি অবস্থার সময় সরকারের করা ‘সবচেয়ে বড় মাত্রার অতিরিক্ত ক্ষমতার ব্যবহার’ বলে মন্তব্য করে।

ব্যঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র ‘কিসসা কুর্সি কা’ (একটি সিংহাসনের কাহিনি) ধ্বংসের ঘটনায়ও সঞ্জয় সরাসরি জড়িত ছিলেন। ‘কিসসা কুর্সি কা’ ১৯৭০-এর দশকে তৈরি ব্যঙ্গাত্মক রাজনৈতিক চলচ্চিত্র, যা ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডকে ব্যঙ্গ করেছিল। সঞ্জয় চলচ্চিত্রটির প্রিন্ট পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ পদক্ষেপকে সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন অনেক সমালোচক।

পরে ১৯৭৮ সালে, জরুরি অবস্থা শেষে, চলচ্চিত্রটি পুনরায় চিত্রায়িত হয় ও মুক্তি পায়। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টে চলচ্চিত্র ধ্বংসের ঘটনায় মামলা হয়েছিল। মামলায় আদালত সঞ্জয় গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। বিচার চলাকালীন তিনি এক মাস কারাগারে ছিলেন। পরবর্তী সময় সুপ্রিম কোর্ট থেকে খালাস পান।

বিতর্কিত নানা পদক্ষেপের কারণে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাচ্যুত হন। তবে ১৯৮০ সালে কংগ্রেস আবার জয়ী হয় এবং সঞ্জয় গান্ধী লোকসভার সদস্য হন। তিনি দেশের রাজনীতিতে মায়ের পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

জরুরি অবস্থার সময় সরকারের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাচ্যুত হন। তবে অপরাধ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিতে ক্ষুব্ধ ভোটাররা ১৯৮০ সালে আবার তাঁকে বিপুল ভোটে জয়ী করেন। একই বছর সঞ্জয় গান্ধী লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে দেশে মায়ের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হতো। ১৯৮০ সালের মে মাসে, মৃত্যুর ঠিক এক মাস আগে, তিনি তাঁর মায়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস (আই বা ইন্দিরা) দলকে ৯টি রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে আটটিতে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

পশ্চিমবঙ্গে একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন সঞ্জয় গান্ধী। ০২ জুন ১৯৭৬
ছবি: বরুণ গান্ধী/এক্স

হত্যাচেষ্টা ও নিরাপত্তাঝুঁকি

সঞ্জয় গান্ধী রাজনৈতিক জীবনে তিনবার হত্যাচেষ্টার সম্মুখীন হন। মার্কিন দূতাবাসের একটি নথিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বরে অজ্ঞাত হামলাকারী সঞ্জয় গান্ধীকে নিশানা বানিয়েছিলেন। একই বছরের আগস্টে তাঁকে লক্ষ্য করে তিনবার গুলি করা হয়, তবে তিনি গুরুতর আহত হননি। এ ঘটনা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে দেয়। হত্যাচেষ্টার পেছনে দায়ী করা হয় ‘বহিরাগত শক্তি’কে।

হত্যাচেষ্টার এ তথ্য উইকিলিকস প্রকাশ করার আগে ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের মধ্যেই সীমিত ছিল এবং জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পরও কোনো তদন্তে প্রকাশ পায়নি।

বিমান দুর্ঘটনার দিন

২৩ জুন ১৯৮০-এর সেই সকালে, সঞ্জয় গান্ধী সকাল ৭টা ৪৮ মিনিটে কুর্তা-পায়জামা ও কোলাপুরি চপল পরে সফদরজং বিমানবন্দরে পৌঁছান। তিনি নিজের প্রিয় স্টান্ট বিমানের (পিটস এস–২এ) ককপিটে ওঠেন। সামনের আসনে ছিলেন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সুভাষ সাক্সেনা। সঞ্জয়ের এটি চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের। তবু নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন।

সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। অর্থাৎ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে সঞ্জয় আকাশে স্টান্ট শুরু করেন। কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্যকিছু ছিল। বিমান যথাযথ উচ্চতায় পৌঁছাতে না পারায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ডানা নিচে গাছে ধাক্কা খায়। উড্ডয়নের মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে (সকাল ৮টা ১০ মিনিট) বিমানটি নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনের কাছে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন সঞ্জয় গান্ধী ও ক্যাপ্টেন সাক্সেনা। ২৪ জুন সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানায়, তাঁর মৃত্যু মাথায় আঘাতের কারণে হয়েছে।

ইন্দিরা গান্ধী নিজের অফিসে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে শুধু বিমানের ধ্বংসস্তূপই দেখতে পান। তাঁর ছেলে আর ফিরে আসেননি। কংগ্রেসের নেতাদের মতে, সঞ্জয় ছিলেন ইন্দিরার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। তাই এ মৃত্যু তাঁর পরিবারের জন্য ছিল এক গভীর আঘাত। সঞ্জয়ের মৃত্যুতে ইন্দিরা ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বিষয়টি দেখাননি। রাজনীতিবিদদের ধারণা, যদি সঞ্জয় গান্ধী অকালেই মারা না যেতেন, তবে কংগ্রেসের বর্তমান ও দেশের রাজনৈতিক চিত্র হয়তো ভিন্ন হতো।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয় গান্ধী নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় কংগ্রেস-ইউ দলের আর পি যাদব ১৯৮০ সালের ১১ অক্টোবর একটি চিঠি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, তৎকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা ও বিরোধী রাজনীতিক নানাজি দেশমুখ একজন উগ্র হিন্দু মেকানিককে বিমানের ইঞ্জিনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করতে প্ররোচিত করেছিলেন। ওই মেকানিক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্য ছিলেন।

অভিযোগ ওঠে দলের বিহারের সদস্য আর পি সারাঙ্গী দলীয় সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ীকে চিঠিটি লিখেছিলেন। তবে তিনি চিঠি লেখার অভিযোগ অস্বীকার এবং যাদবকে ‘চরিত্রহানি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

কীভাবে চিঠির ওই ফটোকপি পেয়েছেন, সেটি যাদব বলেননি। আর বাজপেয়ী বলেছিলেন, তিনি কখনো চিঠিটি পাননি এবং অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য সরকারিভাবে তদন্তের দাবি করেন।

ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধী ‘ভারতের রাজকুমার’ নামে পরিচিত ছিলেন
ছবি: বরুণ গান্ধী/এক্স

রাজনৈতিক বিতর্ক আরও গভীর হয় যখন সঞ্জয়ের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক রাজ্যসভা সদস্য সুব্রামনিয়ান স্বামী ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সোভিয়েতরা বিমানে ফাটল তৈরি করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন এবং সোনিয়া গান্ধী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবির এজেন্ট ছিলেন। সুব্রামনিয়ানের অভিযোগ, সোভিয়েত ইউনিয়ন সোনিয়ার (সঞ্জয়ের ভাই রাজীব গান্ধীর স্ত্রী) সুবিধার জন্য সঞ্জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

সোনিয়ার বাবাও কেজিবির একজন এজেন্ট ছিলেন, যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দী করার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়োগ করেছিল বলে অভিযোগ করেন স্বামী।

সুব্রামনিয়ান স্বামী টুইট করেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত টিডিকে-কে সুবিধা দেওয়ার জন্য সোভিয়েতরা তাঁর (সঞ্জয়ের) বিমানে একটি ফাটল তৈরি করে এবং তাঁর জীবন শেষ করে। বিমানটি আশোকা হোটেলের কাছে বিধ্বস্ত হয়, কিন্তু বিস্ফোরিত হয়নি। কেন?’ এখানে ‘টিডিকে’ হলো, সোনিয়ার জন্য স্বামীর ব্যবহার করা সংক্ষিপ্ত নাম।

সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধী ও ছেলে ফিরোজ বরুণ গান্ধী জীবিত ছিলেন। দুজনই পরে ভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সঞ্জয় মাত্র ৩৩ বছর বয়সে চলে গেলেও, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর প্রভাব আজও অম্লান। তাঁর অকালমৃত্যু দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারা বদলে দেওয়ার একটি মুহূর্তও।

সঞ্জয় গান্ধী বেঁচে থাকলে হয়তো কংগ্রেসের নেতৃত্ব, দলের অভ্যন্তরীণ শক্তির ভারসাম্য ও নীতিনির্ধারণের রূপ ভিন্ন হতো। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভাই রাজীব গান্ধী উঠে আসেন নেতৃত্বের কেন্দ্রে। সঞ্জয়ের মৃত্যু নিয়ে রহস্য, হত্যাচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আজও বিতর্কের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। সব মিলিয়ে, কীভাবে একজন নেতার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি পুরো দেশের রাজনৈতিক গতিপথ গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেটিই মনে করিয়ে দেয় সঞ্জয়ের জীবন ও মৃত্যু।

  • তথ্যসূত্র: ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই) আর্কাইভস, দ্য উইক ও এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা