গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে বিজেপি সরকার: সোনিয়া
সংসদ থেকে গণহারে বিরোধী সদস্যদের বহিষ্কারের পর কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মন্তব্য, এই বিজেপি সরকার গলা টিপে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সেটা করেছে সংসদে ন্যায্য প্রশ্ন তোলার অপরাধে।
আজ বুধবার সকালে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সোনিয়া এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অতীতে কখনো এত সংসদ সদস্যকে এভাবে বহিষ্কার করা হয়নি। সরকার তা করল, কারণ এই সদস্যরা ন্যায্য ও যুক্তিপূর্ণ দাবি জানাচ্ছিলেন।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে ১৩ ডিসেম্বর দুই তরুণ নিরাপত্তারক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে লোকসভা কক্ষে ঢুকে পড়েন। দর্শক গ্যালারি থেকে তাঁরা সভাকক্ষে ঝাঁপ দেন। তাঁদের হাতে ছিল হলুদ রংমশালের কৌটো। হলুদ ধোঁয়ায় ভরিয়ে দেওয়া হয় সভা। তাঁদের মুখে ছিল স্বৈরতন্ত্রবিরোধী স্লোগান।
একই সময়ে সংসদ ভবনের বাইরে একই ঢঙে বিক্ষোভ দেখানোর কারণে গ্রেপ্তার করা হয় দুই তরুণ-তরুণীকে। তাঁদের কণ্ঠেও ছিল স্বৈরতন্ত্রবিরোধী স্লোগান। গ্রেপ্তার তরুণদের দাবি, কাজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তাঁরা এভাবে প্রতিবাদী হয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।
লোকসভায় যাঁরা ঢুকেছিলেন, তাঁদের বৈধ পাস ছিল। সেই পাস দিয়েছিলেন কর্ণাটক থেকে নির্বাচিত বিজেপির এক সদস্য।
বিরোধীরা ওই ঘটনা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী অথবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে আসছেন। তাঁদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনার দায় স্বীকার করতে হবে। কারণ, সংসদ ভবন চত্বর ও তার বাইরে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব দিল্লি পুলিশের, যা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু ঘটনা হলো, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেউই সংসদের কোনো কক্ষেই ওই ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। অথচ সংসদকে উপেক্ষা করে তাঁরা দুজনেই সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই বিষয়ে কথা বলেছেন।
বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের দাবি, এ আচরণ গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদের পরম্পরার বিরোধী। কেননা, রীতি ও পরম্পরা অনুযায়ী অধিবেশন চলাকালে সরকার সংসদের বাইরে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানায় না, কোনো জরুরি ঘোষণা অথবা কোনো বিষয়ে জবাবদিহি করে না।
কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী এ কারণেই বিরোধীদের দাবি ন্যায়সংগত ও যুক্তিযুক্ত বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনা অস্বাভাবিক। ওই ঘটনা প্রমাণ করে নিরাপত্তাব্যবস্থায় কী বিপুল গলদ রয়েছে। অথচ সংসদে সরকার নীরব। এই ঔদ্ধত্য সীমাহীন।
একই কথা বিরোধীদেরও। তাঁরা বলছেন, এতগুলো নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে রক্ষীদের চোখে ধুলা দিয়ে রংমশালের কৌটো নিয়ে সভাকক্ষে ঢোকা গেলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও তো ঢোকা যায়? তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দায় নেবেন না? বিজেপির যে সংসদ সদস্য ওই তরুণদের পাস দিলেন, তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে না?
ওই ঘটনার পর বিরোধী দমনে সংসদের উভয় কক্ষ থেকে দফায় দফায় ১৪১ (কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকে বলেছেন ১৫২ জন) বিরোধী সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। শুধু বহিষ্কারই নয়, বহিষ্কৃত সদস্যরা কী কী করতে পারবেন না, সেই ফিরিস্তিও সংসদ সচিবালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, তাঁরা লোকসভা বা রাজ্যসভার লবি অথবা দর্শক গ্যালারিতেও ঢুকতে পারবেন না। তাঁরা সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও যোগ দিতে পারবেন না। কমিটির কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। কোনো প্রশ্নও জমা দিতে পারবেন না। এমনকি সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালে তাঁরা দৈনন্দিন ভাতাও পাবেন না। সংসদ চলাকালে সদস্যরা হাজিরা দিলে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দৈনন্দিন ভাতা হিসেবে পান।
বহিষ্কারের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনের বাইরে সদস্যরা ‘নকল অধিবেশনে’ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে নকল করেন। ধনখড় তাতে ব্যথিত হন। ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপরাষ্ট্রপতিকে ফোন করেন। তারপর ধনখড় ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে জানান, প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে তাঁকে বলেছেন, ২০ বছর ধরে তিনি এ অসম্মান সহ্য করে আসছেন। তবে সংসদ ভবন চত্বরে উপরাষ্ট্রপতিকে এমন আচরণ সইতে হবে, তা ভাবেননি। এটা দুর্ভাগ্যের।