দিল্লিতে ‘লিভ ইনে’ (বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক) থাকা তরুণী শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যার ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্য করে এবার আলোচনায় এসেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরমন্ত্রী কৌশল কিশোর। তিনি বলেছেন, ‘এই হত্যার জন্য লিভ ইন সম্পর্ক দায়ী। তাই মেয়েদের লিভ ইন সম্পর্কে থাকা উচিত নয়।’
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সিএনএন–নিউজ ১৮ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৌশল কিশোর এমন মন্তব্য করেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৌশল কিশোর বলেন, ‘ভারতের শিক্ষিত নারীরা ঐতিহ্য থেকে সরে গিয়ে বিয়ের আগেই সঙ্গীর সঙ্গে বসবাস করছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মে মাসে শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় তাঁর লিভ ইন সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী কৌশল কিশোর বলেন, ‘শিক্ষিত নারীদের ভুলের কারণেই এ ধরনের অপরাধ ঘটছে।’
কৌশল কিশোর বলেন, ‘আপনি যদি কারও প্রেমে পড়েন, তাহলে শুরুতেই বিয়ে করে ফেলুন। লিভ ইন সম্পর্ক আবার কী? এ বিষয়গুলোই অপরাধকে উৎসাহিত করছে।’
শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যার প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, শ্রদ্ধার মা–বাবা তাঁদের এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি। তারপরও তিনি (শ্রদ্ধা) ওই প্রেমিকের সঙ্গে থাকার বিষয়টি বেছে নিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষিত মেয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের (নারী) ধারণা, তাঁরা খুব স্পষ্টবাদী এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু এটা তাঁদের ভুল ধারণা।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৌশল কিশোরের এমন মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা করছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, তাঁর চিন্তা–ভাবনা দুর্বৃত্তের মতো।
শিবসেনা দলের নেতা প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘তিনি বলেননি এই দেশে মেয়েরা কেন জন্মেছে, এ কারণে আমি বিস্মিত। এ দেশে নির্লজ্জ, হৃদয়হীন ও নিষ্ঠুর এবং সব সমস্যার জন্য মেয়েদের দায়ী করার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে।’
কটূক্তির জন্য মন্ত্রী কৌশলকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে দাবি জানিয়েছেন শিবসেনা দলের নেতা প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। তবে ওই টুইটে অনেকেই মন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সত্যি ভাই, যদি তিনি বাবা–মায়ের কথা শুনতেন, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। আমাদের বাবা–মায়েরা অভিজ্ঞ মানুষ। তাঁরা অন্তত জানেন আমাদের জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ।’
পুলিশ বলেছে, শ্রদ্ধাকে তাঁর প্রেমিক আফতাব পুনাওয়ালা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এরপর তাঁর দেহ কয়েক টুকরা করে দিল্লিতে তাঁদের বাড়ির কাছের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলেন। আফতাব পুনাওয়ালা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন। এখনো তিনি কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি।