জননিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণে জোর আরএসএস প্রধানের

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত
ছবি : এএনআই

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত আবার নতুন করে জননিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণের আবশ্যকতার ওপর জোর দিলেন। তিনি বললেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এমন একটা নীতি গ্রহণ করা দরকার, যা সব ধর্মের, সব মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। নইলে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা এবং জবরদস্তি ধর্মান্তরকরণ দেশকে ভাগাভাগির মুখে ঠেলে দেবে।

এ প্রসঙ্গে হিন্দু রাষ্ট্রের ব্যাখ্যাও দেন মোহন ভাগবত। তিনি বলেন, সংঘ হিন্দু রাষ্ট্র বলতে বোঝায় সেই দেশ, যেখানে ধর্ম–নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে। ভাগবত বলেন, ক্রমশ হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা স্পষ্টতর হচ্ছে। তা যত হচ্ছে, ততই এক দল মানুষ ভয় দেখিয়ে বলতে শুরু করেছে, হিন্দু রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থহানি ঘটবে। কিন্তু এটা সংঘের চেতনা নয়; হিন্দুদেরও নয়।

বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্যের পর উদয়পুর ও অমরাবতীতে তাঁর সমর্থনকারীদের হত্যার ঘটনার উল্লেখ করে ভাগবত বলেন, কোনো এক অন্যায়ের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা ঠিক নয়। সংঘ সৌভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও শান্তির পক্ষে।

প্রতিবছর বিজয়া দশমীর দিন নাগপুরে আরএসএস সদর দপ্তরে এক বিশেষ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। সে উপলক্ষে সংঘপ্রধান ভাষণ দিয়ে থাকেন। তাতে সংঘের আদর্শের বিকাশ ঘটানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।

গতকাল বুধবার সংঘের সেই অনুষ্ঠানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দেশের নীতি কেমন হওয়া দরকার, তার বিশেষ ব্যাখ্যা করে মোহন ভাগবত বলেন, এমন ধরনের সর্বগ্রাহ্য নীতি গৃহীত না হলে দেশ ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ইউরোপের কসোভো, আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান ও এশিয়ার পূর্ব তিমুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ভারসাম্য থাকা জরুরি। সে কারণে এমন একটা নীতি দরকার, যা সব ধর্মের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। এটা না হলে দেশ ভাঙার সম্ভাবনা যে প্রবল, ভাগবত তাঁর ভাষণে সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন।

মুসলিমপ্রধান ইন্দোনেশিয়া ভেঙে ২০০২ সালে নতুন খ্রিষ্টানপ্রধান দেশ হয়েছিল পূর্ব তিমুর। ২০০৮ সালে খ্রিষ্টানপ্রধান সার্বিয়া ভেঙে জন্ম নেয় মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র কসোভো। মুসলিমপ্রধান সুদান দুই টুকরা হয় ২০১১ সালে। প্রধানত খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী জনগণের জন্য গঠিত হয় দক্ষিণ সুদান। জননিয়ন্ত্রণ নীতি গৃহীত না হলে ভারতের দশাও যে তেমন হতে পারে, সেই ইঙ্গিতই মোহন ভাগবত দিতে চেয়েছেন। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ টানা ও ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেওয়া।

কিন্তু ঘটনা হলো, সরকারি প্রচার, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ও মেয়েশিশুদের দিকে সার্বিক নজর বৃদ্ধির দরুন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নগামী। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতীয় নারীদের প্রজনন হার কমে হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। ১৯৫২ সালে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিবিদদের একাংশ এখনো কম আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে ‘হিন্দু গ্রোথ রেট’ বলে অভিহিত করে থাকেন।

অথচ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তারতম্য ক্রমে ঘুচে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হিন্দু নারীর তুলনায় মুসলিম নারীদের প্রজননক্ষমতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি কমেছে। মুসলমান প্রজনন হার যেখানে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, হিন্দু প্রজনন হার সেখানে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ শতাংশ থাকাই উপযুক্ত।

অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত নারীর ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন, সমাজের সর্বস্তরে নারীর কাজের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার থাকা জরুরি। না হলে দেশ এগোতে পারবে না। বুধবারের এ বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মহিলা পর্বতারোহী সন্তোষ যাদবকে। এই ভারতীয় নারী বিশ্বে প্রথম, যিনি দুবার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন।

আরও পড়ুন