জ্ঞানবাপি মসজিদ, বিচারক মামলা শুনবেন

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে জ্ঞানবাপি মসজিদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদের দেয়ালে থাকা হিন্দু দেব–দেবীর মূর্তি পূজা করার অধিকারের আবেদন শুনবেন আদালত।

বারানসি জেলা আদালতের সবচেয়ে বয়স্ক বিচারক অজয় কুমার বিশ্বাস আজ সোমবার বলেন, পূজা অর্চনার অধিকার চেয়ে করা মামলা সমর্থনীয়। তিনি সেই মামলা শুনবেন।

আরও পড়ুন

জ্ঞানবাপি মসজিদ কর্তৃপক্ষ অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ ওই আবেদন চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল, পূজার অধিকার চেয়ে দায়ের হওয়া ওই মামলা ও সে–সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় আইনের পরিপন্থী। ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনে (প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট) বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় দেশের সব ধর্মীয় উপাসনাস্থলের চরিত্র যেমন ছিল তেমনই থাকবে। কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। ওই আইনে একমাত্র ছাড় দেওয়া হয়েছিল অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে। সেই সময় ওই মন্দির-মসজিদের দাবি নিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আইনি লড়াই চলছিল।

২০২১ সালের আগস্ট মাসে পাঁচ হিন্দু নারী জ্ঞানবাপি মসজিদের বাইরের এক দেয়ালে খোদাই করা হিন্দু দেব–দেবীর মূর্তি (মা শ্রীঙ্গার গৌরী) বছরভর পূজা করার অনুমতি চেয়ে বারানসি দায়রা আদালতে এক মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর একটি কমিটি গঠন করে বলেন, মসজিদ চত্বর জরিপ হবে ও তার ভিডিওগ্রাফ করা হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী জরিপ ও ভিডিওগ্রাফ হয়। আদালতে তা জমা দেওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি জেলা আদালতে স্থানান্তর করেন।

আরও পড়ুন

জরিপ অনুযায়ী হিন্দুরা মসজিদ চত্বরের অজুখানায় ‘শিবলিঙ্গ’–এর উপস্থিতি দাবি করেছিলেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল সেটি একটি ফোয়ারা। তখন দাবি ওঠে ওই বিতর্কিত স্থাপত্যটি কোন সময়ে নির্মাণ হয়েছিল, তা জানতে তার ‘কার্বন ডেটিং’ পরীক্ষা করা হোক। সুপ্রিম কোর্ট সেই সব দাবি নাকচ করে দেন। এখন জেলা আদালত মামলা শুনতে রাজি হওয়ায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বিতর্কের অবসান দ্রুত হবে না।

পূজা অর্চনার দাবি জানিয়ে আবেদনে বলা হয়, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আক্রান্ত হয়। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়। মন্দির-মসজিদের একটি দেয়াল এক। সেই দেয়ালে মা শ্রীঙ্গার গৌরীর মূর্তি রয়েছে।

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক শুরু হওয়ার সময় থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও বিজেপি বলে আসছে, অযোধ্যার মতো কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরায় শ্রীকৃষ্ণর জন্মস্থান তারা উদ্ধার করবে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদের মতো মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান লাগোয়া রয়েছে শাহি ঈদগা মসজিদ। দুই হিন্দু তীর্থস্থানকে মুক্ত করার অঙ্গীকার বিজেপিরও দীর্ঘদিনের।

সারা দেশে যাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা যাতে না ছড়ায়, সেই লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও উপাসনাস্থলের আইনপ্রণয়ন করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জায়গায় জায়গায় পূজার অধিকার দাবি করে মামলা হচ্ছে। আশঙ্কা বাড়ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বারানসি দেশের অন্যতম প্রধান তীর্থক্ষেত্র। গঙ্গার ধারে অবস্থিত এই মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদ। জেলা আদালতের রায় উপলক্ষে গত রোববার থেকে শহরে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়।