মোদির ‘অনুগত’ চ্যানেলের ১৪ উপস্থাপককে বর্জন করবে ইন্ডিয়া জোট

দিল্লিতে ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারসহ জোটের নেতারা
ছবি: এএনআই

ভারতের শাসক দল বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ‘অনুগত ও অনুরক্ত’ গণমাধ্যম বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। গতকাল বুধবার জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোদির ‘অনুগত’ গণমাধ্যম ও টেলিভিশন উপস্থাপকের তালিকাও আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের গণমাধ্যম উপকমিটি।

গণমাধ্যম উপকমিটি জানায়, হিন্দি ও ইংরেজি চ্যানেলের ১৪ জন উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়া জোটের কোনো নেতা যাবেন না। এঁদের মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিক টিভির অর্ণব গোস্বামী, ইন্ডিয়া টুডের গৌরব সাওয়ান্ত ও টাইমস নাও–এর নভিকা কুমার।

এই বর্জন কার্যকর হলে ভারতে তা হবে অভিনব। অধিকাংশ বিরোধী দল নিয়ে গঠিত কোনো জোট এর আগে এভাবে সম্মিলিতভাবে গণমাধ্যমের একাংশকে বর্জন করেনি।

ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠক বসেছিল গত বুধবার রাতে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের দিল্লির বাড়িতে। জোটের ১৪টি দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটির অন্যতম সদস্য তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

কলকাতায় ওই দিনই জবাবদিহির জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে তলব করেছিল। জোটের আরেক শরিক সিপিএম ওই কমিটির জন্য এখনো কাউকে মনোনীত করেনি।

সমন্বয় কমিটির বৈঠক ওই দুই নেতাকে বাদ দিয়েই বসেছিল। অভিষেকের আসন খালি রাখা ছিল। বৈঠকে ইডি, সিবিআই বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে বিরোধীদের অযথা হয়রানির সমালোচনা করা হয়। অন্য বিষয়ের মধ্যে ঠিক হয়, মোদি অনুগত গণমাধ্যমের একাংশকে ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক বর্জন করবে। ওই সব গণমাধ্যমে জোটের শরিকেরা কেউ কোনো প্রতিনিধি পাঠাবে না।

এ ছাড়া বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ভবিষ্যতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রচারের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে ইন্ডিয়া জোট জনসভার আয়োজন করবে। প্রথম জনসভা হবে বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশে।
নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে গণমাধ্যমের একটা বড় অংশ সাংবাদিকতার নামে ‘অন্ধ মোদি বন্দনা’ শুরু করেছে। বিরোধীরা এই ধরনের গণমাধ্যমকে বিশেষ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের একটা বড় অংশকে, ‘গোদি মিডিয়া’ (হিন্দিতে ‘গোদ’ বা ‘গোদি’ অর্থ কোল) বলে চিহ্নিত করেছে। সেখানে শাসক দলের বন্দনা ছাড়াও বিরোধীদের নানাভাবে অসম্মান করা হয়। বিরোধীদের খবর প্রকাশ করা হয় না। খবর বিকৃতও করা হয়। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার খবরকে গুরুত্ব না দেওয়া একটা উদাহরণ। ঠিক হয়েছে, এই ধরনের চ্যানেল বর্জন করা হবে।

বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেন, কোন কোন সংবাদ চ্যানেলে বা কোন কোন উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে ‘ইন্ডিয়া’ জোট নেতাদের পাঠাবে না, সেই তালিকা গণমাধ্যম উপকমিটিকে তৈরি করতে বলা হয়েছে।

আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডা বলেন, গণমাধ্যম উপকমিটিও এই ধরনের এক প্রস্তাব দিয়েছে। কোনো কোনো সংবাদ উপস্থাপক এমন ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যা দেশে আগুন জ্বালায়। ইন্ডিয়া জোট ওই ধরনের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সমন্বয় কমিটির ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল প্রধানত রাজ্যে রাজ্যে জোট শরিকদের মধ্যে আসন রফা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে। ঠিক হয়েছে, আসন রফার সেই আলোচনা হবে রাজ্য পর্যায়ে। এবং তা করা হবে দ্রুত।

সেটা কীভাবে হবে, কোন ফর্মুলায় হবে—তা নিয়ে এখনো বিরোধী নেতাদের মধ্যে মতৈক্য হয়নি। তবে ঠিক হয়েছে, যা হবে তা এক–দেড় মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে, যাতে প্রচার দ্রুত শুরু করা যায় এবং সংশয়ের কোনো অবকাশ না থাকে।

ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যে আসন রফা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা বা জট প্রধানত চারটি রাজ্যে চার দলের মধ্যে। এই চার রাজ্য হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, দিল্লি ও পাঞ্জাব। চার দল হলো কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম বা বামপন্থী জোট ও আম আদমি পার্টি।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বড় শক্তি। রাজ্য স্তরে বিজেপি প্রধান প্রতিপক্ষ হলেও কংগ্রেস ও সিপিএম সেখানে ওই দুই দলের বিরুদ্ধে সমান আগ্রাসী। কেরালায় মূলত লড়াই সিপিএম ও কংগ্রেস জোটের মধ্যে। দিল্লি ও পাঞ্জাবে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ আম আদমি পার্টি।

এর বাইরে অন্যান্য রাজ্যে তেমন সমস্যা নেই। কারণ, মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খন্ড, তামিলনাড়ুতে আগে থেকেই জোট রয়েছে। বোঝাপড়াও মোটামুটি ভালোই। কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। উত্তর প্রদেশ নিয়েও তেমন কোনো সমস্যা সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের হবে না বলেই ধারণা। এখন দেখার, কোন ফর্মুলায় কত দ্রুত আসন রফার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।