আগুনে ৭ শিশুর মৃত্যু: দিল্লির ওই হাসপাতালের লাইসেন্স ছিল না, ছিল না অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা

ভারতের দিল্লির একটি শিশু হাসপাতালে আগুন লাগেছবি: এক্স থেকে নেওয়া

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে গত শনিবার আগুনে সাত নবজাতকের মৃত্যু হয়। সেই হাসপাতালের লাইসেন্স ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবারের আগুনের ঘটনায় হাসপাতালটির মালিক ও কর্তব্যরত এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও জরুরি নির্গমন পথ ছিল না।

শনিবার দিল্লির হাসপাতালটির ওই ট্র্যাজেডির কয়েক ঘণ্টা আগে গুজরাটের রাজকোট শহরের একটি খেলাধুলার জায়গায় (গেমিং জোন) অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জন নিহত হয়।

নিরাপত্তাব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিথিলতার কারণে ভারতের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড হয়।

শনিবার যে হাসপাতালটিতে আগুন লেগেছে, সেটি রাজধানী নয়াদিল্লির বিবেক বিহার এলাকায় অবস্থিত।

পুলিশ কমিশনার শাহদারা সুরেন্দ্র চৌধুরী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, হাসপাতালটির এনওসির (অনাপত্তি সনদ) মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হয়। এনওসিতে কোনো ভবনের অগ্নিনির্বাপক মানদণ্ড ঠিক আছে বলে সনদ দেওয়া হয়। হাসপাতাল ভবনের উচ্চতা ৪৯ ফুটের বেশি হলে বাধ্যতামূলকভাবে এনওসি নিতে হয়।  

পুলিশ কমিশনার শাহদারা সুরেন্দ্র চৌধুরী বলেন, হাসপাতালটির পাঁচ শয্যার অনুমোদন ছিল। কিন্তু হাসপাতালটিতে শয্যা ছিল ১০টি। আগুন লাগার সময় সেখানে ১২টি নবজাতক ছিল। নিহত সাত নবজাতক ছাড়া বাকি পাঁচ শিশুকে অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গ্রেপ্তার হাসপাতালের মালিক ও পরিচালকের নাম ডা. নবীন কিচি। গ্রেপ্তার দায়িত্বরত চিকিৎসকের নাম আকাশ (পুলিশ তাঁর নামের শুধু একটি অংশ প্রকাশ করেছে)। তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডনীয় নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, আগুনের সময় দায়িত্বরত ডা. আকাশের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা নবজাতকদের চিকিৎসা করার যোগ্যতা ছিল না।
হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় দিল্লি সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

দিল্লির ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক আতুল গর্গ সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছেন, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে হাসপাতালে আগুন লেগেছিল।

আরও পড়ুন

গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, হাসপাতালটিতে অবৈধভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভর্তি করা হতো। পুলিশ এ অভিযোগটিও তদন্ত করছে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতাল ভবনটিতে প্রবেশের পর্যাপ্ত সুবিধা ছিল না। শুধু একটি সিঁড়ি ছিল। তাই উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হয়েছে।

হাসপাতালে আগুনের ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ উল্লেখ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। যাঁরাই দায়ী হোক না কেন, তাঁদের ছাড়া দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহত প্রতি শিশুর পরিবারের জন্য দুই লাখ রুপি এবং আহত প্রতি শিশুর পরিবারের জন্য ৫০ হাজার রুপি সহায়তা ঘোষণা করেছেন।