কাতারে আটক ৮ ভারতীয়র মৃত্যুদণ্ড

এক বছরের বেশি সময় আটক রাখা আট ভারতীয়কে কাতারের এক আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সে দেশের আদালত এ রায় দেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ রায়কে ‘বেদনাদায়ক’ বলে উল্লেখ করেছে।

ওই আটজন ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পদাধিকারী। গত বছরের আগস্টে তাঁদের ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের দোহার কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন সাবেক ক্যাপ্টেন নভতেজ সিং গিল, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্র কুমার ভার্মা, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ট, কমান্ডার অমিত নাগপাল, কমান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, কমান্ডার সুগুণাকর পাকালা, কমান্ডার সঞ্জীব গুপ্ত এবং নাবিক রাগেশ।

মৃত্যুদণ্ডের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়েছে, তারা পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই কর্মীদের পরিবার ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রাখছে। সব ধরনের আইনি পথ খোলা আছে। সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাতার সরকারের সঙ্গে ভারত নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে নিরন্তর আলোচনা চলছে। বিষয়টির গুরুত্ব ও গোপনীয়তার দরুন এ মুহূর্তে ভারত কোনো মন্তব্য করছে না বলে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীতে কাজ করা ওই আট সাবেক কর্তা কাতারের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস’–এ কর্মরত ছিলেন। ওই সংস্থা কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিল। অভিযোগ, ওই ভারতীয়রা ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। বারবার তাঁদের জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিস্তারিতভাবে কাতার ও ভারত কোনো সরকারই প্রকাশ করেনি।

ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ও শাস্তির পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআইয়ের কর্তাদের হাত আছে বলে অনুমান। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য দ্বিমুখী। প্রথমত, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত সাবেক ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মীদের সুনাম নষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, ভারত-কাতার বা অন্য দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সুসম্পর্ক নষ্ট করা।

পাকিস্তানের ক্ষোভের অন্য কারণও আছে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বহু ক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের জায়গা দখল করছেন ভারতীয়রা। তা ছাড়া এই তল্লাটের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন ভালো হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সামরিক স্তরে বোঝাপড়ারও উন্নতি হচ্ছে। এ কারণে ওই আট ভারতীয়র বিরুদ্ধে পাকিস্তানই অভিযোগ আনে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার।

এই ক্ষেত্রে পাকিস্তান কুলভূষণ যাদবের উদাহরণও কাতার কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি। ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কুলভূষণকে ইরান থেকে পাকিস্তান অপহরণ করে সে দেশে নিয়ে এসেছিল ২০১৭ সালে। যদিও পাকিস্তানের দাবি, কুলভূষণ বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়।