ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের পর রাজস্থানেও নতুন মুখ্যমন্ত্রী বানাল বিজেপি
ভারতের ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও বিজেপি বেছে নিল নতুন মুখ। সেই সঙ্গে ইতি ঘটল মরুরাজ্যে বসুন্ধরা রাজের সিকি শতকের রাজত্ব। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হলো ভজনলাল শর্মাকে। লক্ষণীয়, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এই ব্রাহ্মণ নেতা এবারেই প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার ভোটে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বিজেপিতে বিরল।
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর বিজেপি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ করে দিলেন বিজেপিতে বাজপেয়ি–আদভানি অনুগামী ও অনুগতদের জমানাও। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে রমন সিং, শিবরাজ সিং চৌহান ও বসুন্ধরা রাজেই ছিলেন বাজপেয়ি–আদভানিদের অনুগত। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দল ও সরকারে মোদি–শাহ জুটির পূর্ণ কর্তৃত্বও প্রতিষ্ঠিত হলো।
তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে তিন নেতাকে বিজেপি দায়িত্ব দিল, তাঁদের প্রত্যেকের বয়সই ষাটের কম। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাইয়ের বয়স ৫৯, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ৫৮, সংঘ–প্রিয় ভজনলাল শর্মা ৫৬। স্পষ্টতই, মোদি–শাহ জুটি নবীন প্রজন্মকে তুলে আনতে চাইছেন। সেই সঙ্গে ভরসা করছেন তাঁদের ওপর, যাঁরা দলে তাঁদের অনুগত থাকবেন। ফলে দিল্লি থেকে রাজ্য পরিচালনাও করা যাবে।
তিন রাজ্যে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একই ধরনের কৌশল অনুসরণ করছে। তিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে দুজন করে উপমুখ্যমন্ত্রী। বসুন্ধরার পাল্টা হিসেবে মোদি–শাহ জুটি তুলে ধরেছিলেন জয়পুর রাজপরিবারের সদস্য দিয়া কুমারীকে। তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। আরেক উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তফসিল জাতিভুক্ত বিধায়ক প্রেমচাঁদ বৈরওয়া।
বসুন্ধরাকে বোঝানোর মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে পরিষদীয় দলের নেতা বাছাইয়ের দায়িত্ব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। বিজেপির রাজনীতিতে রাজনাথ প্রবীণই শুধু নন, তিনিও বাজপেয়ি–আদভানিদের অনুগত। বসুন্ধরাকে বোঝানোর দায়িত্ব তাই তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি দলীয় সূত্রের খবর, বসুন্ধরাকে দিয়েই পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে ভজনলালের নাম প্রস্তাব করানো হয়।
২৫ বছর ধরে মরুরাজ্যে বিজেপির রাজনীতি ঘুরপাক খেয়েছে বসুন্ধরাকে কেন্দ্র করেই। তিনবারের এই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মোদি–শাহ জমানায় তাঁদের অন্ধ অনুগামী হননি। নিজের শর্তে রাজ্য রাজনীতি পরিচালনা করে গেছেন। এই প্রথম রমন সিং, শিবরাজ সিং চৌহানের মতো তিনিও পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে এলেন। হিন্দি বলয়ের এই তিন রাজ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপিকে এর খেসারত দিতে হতে পারে কি না, সেই চর্চা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
রাজস্থানে লোকসভার মোট আসন ২৫। গতবার বিধানসভায় কংগ্রেস জিতলেও লোকসভার ভোটে বিজেপি ২৫ আসনেই জয়লাভ করেছিল। মধ্যপ্রদেশে ২৯ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ২৮টি, ছত্তিশগড়ে ১১ আসনের মধ্যে ৯টি। তিন প্রতিষ্ঠিত নেতার কর্তৃত্ব খর্ব করে নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিতে ভর দিয়ে গতবারের মতো আগামী বছরও বিজেপি এই তিন রাজ্যের মোট ৬৫ আসনের মধ্যে ৬২টি জিততে পারবে কি না, সেই জল্পনায় মঙ্গলবার থেকেই রাজনীতি মুখর। সন্দেহ নেই, বিধানসভায় বিপুল সাফল্যের পর মোদি–শাহ জুটি একটা বড় ঝুঁকি নিল।