ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত কুশিয়ারা পানিবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করেছে আসামের বাঙালি প্রধান বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিডিএফ বলেছে, স্থানীয় মানুষকে পুরো অন্ধকারে রেখে এ চুক্তি করা হয়েছে।  

বিডিএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরাকের জনগণ তথা নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিধায়কদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে ৬ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে কুশিয়ারা পানিবণ্টন চুক্তি। অথচ এই চুক্তিতে কী আছে এবং বরাক উপত্যকায় এর কী প্রভাব পড়তে পারে, এসব নিয়ে আজ পর্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে নীরব সব রাজনৈতিক দলসহ বুদ্ধিজীবী মহল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তির বিশদ জনসমক্ষে প্রকাশসহ কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে বরাকের ওপর এই পানিবণ্টনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করার দাবি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, একটি নদীর সঙ্গে জনজীবনসহ একটি অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে এবং সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায়ে তাকে সংশোধিত করা হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, এই জন্য এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন করার আগে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেসব কিছুই করা হয়নি। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।

প্রদীপ দত্তরায় বলেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও অগ্রিম জানানো হয়েছে কি না, তাতেও সন্দেহ রয়েছে। এতে আবার প্রমাণিত হলো এই উপত্যকার জনগণ বাঁচুক বা মরুক তা নিয়ে বিজেপি সরকারের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।

বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া এ রকম কোনো চুক্তি হতে পারে না। এর প্রমাণ তিস্তার পানিবণ্টন আটকে আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে সামনেই নির্বাচন এবং তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থ হওয়ায় শেখ হাসিনাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে, তাই তড়িঘড়ি এই চুক্তি করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক ফায়দা তুলছেন। কিন্তু এতে বরাকের স্বার্থ রক্ষিত হলো কি না, তা নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই।

বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সরকার শুকনা মৌসুমে কুশিয়ারার বাংলাদেশের অংশ থেকে পাম্পের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক মিটার পানি উত্তোলন করার পরিকল্পনা করছে। এই পানি বিভিন্ন খালের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের কাজে লাগানো হবে, যাতে উপকৃত হবেন প্রায় এক লাখ কৃষিজীবী। এর আগে এই উদ্দেশ্যে রহিমপুরে কুশিয়ারা থেকে যে কৃত্রিম খাল নির্মাণ করা হয়েছিল, কুশিয়ারার নদীবক্ষ উঁচু হয়ে যাওয়ায় অনেক দিন ধরে এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। ফলে সিলেট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার এক বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজ উৎপাদন পানিসেচের অভাবে পতিত পড়ে থাকত।  

প্রদীপ দত্তরায় বলেন, শুকনা মৌসুমে এভাবে কৃত্রিম উপায়ে পানি টেনে নিলে এর প্রভাব বরাক নদীসহ এর বিভিন্ন শাখা নদী এবং খাল-বিলের ওপর পড়তে বাধ্য। শীতের মৌসুমে এসব শুকিয়ে যেতে পারে। এর ফলে বরাকের অন্যতম কৃষিজ উৎপাদ ধান এবং সুপারি দুই-ই ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বরাকের সামগ্রিক জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রদীপ দত্তরায় বলেন, অবিলম্বে এই চুক্তির বিশদ বরাকবাসীকে জানাতে হবে। আর কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে বরাক উপত্যকার ওপর এই চুক্তির জন্য কী কী প্রভাব পড়তে পারে, তার সমীক্ষা করে সেই রিপোর্টও শিগগিরই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।