কলকাতায় অ্যাডিনো ও নিউমোনিয়ায় ৬ শিশুর মৃত্যু
কলকাতায় অ্যাডিনোভাইরাস ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ তীব্র হচ্ছে। আজ রোববার সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কলকাতার বিসি রায় সরকারি শিশু হাসপাতালে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জ্বর ও শাসকষ্টসহ একাধিক উপসর্গ নিয়ে এসব শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
যদিও একটি শিশুর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে অ্যাডিনো ও নিউমোনিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, মৃত শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত শিশুশয্যা নেই। বাধ্য হয়ে অনেক সংকটাপন্ন শিশুকে সাধারণ বেডে রাখতে হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিসি রায় শিশু হাসপাতালে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিগত দুই মাসে পশ্চিমবঙ্গে ৯৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ শিশুর। তবে এসব শিশুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে আক্রান্ত শিশু ভর্তি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ শুধু অ্যাডিনোর জন্য হচ্ছে তা নয়, যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণে সেটা হতে পারে। এ ছাড়া বেশ কিছু শিশুর আগে থেকে অন্যান্য অসুস্থতা (কোমরবিডিটি) ছিল।
এদিকে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অ্যাডিনোভাইরাস পরীক্ষার কিটের অভাব দেখা দিয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই অ্যাডিনো পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট পাওয়া যাবে।
জ্বর, সর্দি–কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। প্রতিদিনই কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব উপসর্গ নিয়ে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। ভিড় বেশি বেলেঘাটার আইডি হাসপাতাল, মানিকতলার বিসি রায় শিশু হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গত বুধবার এই ভাইরাসে সংক্রমিত পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিসি রায় শিশু হাসপাতাল এবং কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরদিন বৃহস্পতিবার মারা গেছে আরও পাঁচ শিশু। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ভাইরাসটির প্রকোপ মোকাবিলায় রাজ্য সরকার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ৭২টি এবং বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে ৫০টি অতিরিক্ত শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে কলকাতার সব বড় হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার সরঞ্জাম পর্যাপ্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, রাজ্য সরকার ভাইরাসটির প্রকোপের তথ্য গোপন করছে। অবিলম্বে এই ভাইরাস পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি।