মণিপুর নিয়ে জাতিসংঘের বক্তব্য খারিজ করল ভারত

মণিপুর সংঘাত নিরসনে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের
এএনআই ফাইল ছবি

মণিপুর নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এই বিবৃতিকে ‘অবাঞ্ছিত, অনুমানমূলক এবং বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সদস্যের দপ্তর। বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ।

ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের বিশেষ কার্যপ্রণালি শাখায় গত সোমবার এক মৌখিক বিবৃতিতে জাতিসংঘে ভারতের ‘পার্মানেন্ট মিশন’ জোর দিয়ে বলেছে যে মণিপুরের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল। ভারত সরকার সেখানে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘সরকার মণিপুরের জনগণসহ ভারতের জনগণের মানবাধিকার রক্ষার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ভারতের স্থায়ী মিশন সম্পূর্ণরূপে (জাতিসংঘের) সংবাদ বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে, কারণ, এটি শুধু অযৌক্তিক, অনুমানমূলক ও বিভ্রান্তিকর নয়, বরং মণিপুরের পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বুঝতে ব্যর্থ।’

জাতিসংঘের ১৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল মণিপুরে যৌন সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গৃহ ধ্বংস, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, নির্যাতন, দুর্ব্যবহারসহ ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহার’ সম্পর্কে সোমবার সতর্কতা উত্থাপন করে। এরপর ভারত তার প্রতিক্রিয়া জানায়। জাতিসংঘের দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মেক্সিকোর আইন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান–বিশেষজ্ঞ ডরোথি এস্ট্রাডা-ট্যাঙ্ক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিন খানও এই দলের সদস্য।

তাদের সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে তাঁরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিবেদন ও চিত্র দেখে শঙ্কিত। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল লক্ষ করেছে যে বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী ও মেয়ের ওপর লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রধানত সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের নারীদের ‘টার্গেট’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কথিত সহিংসতার মধ্যে রয়েছে দলবদ্ধ ধর্ষণ, রাস্তায় নারীদের নগ্ন করে প্যারেড করানো, মারাত্মক মারধর—যার ফলে তাঁদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের জীবিত বা মৃত অবস্থায় পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে প্রধানত হিন্দু মেইতেই ও খ্রিষ্টান কুকি জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর মণিপুরের গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা ‘অপ্রতুল মানবিক প্রতিক্রিয়া’র দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। এই সংঘর্ষ যে একদিকে জাতিগত, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক—সেদিকেও ইঙ্গিত করেছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা।

প্রতিনিধিদলের হিসাব অনুযায়ী, আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত আনুমানিক ১৬০ জন মণিপুরে নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই কুকি জাতিসত্তার বলে দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চার মাসের সংঘর্ষের জেরে ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন গোটা রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে বলেছে, ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য নির্ধারিত ৬০ দিন অপেক্ষা না করে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল প্রেসবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

ভারতীয় মিশন আশা প্রকাশ করেছে যে ভবিষ্যতে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল তাদের মূল্যায়নে আরও নিরপেক্ষ হবে।

ভারতের তরফে বলা হয়েছে যে তারা আশা করেছিল, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে এবং সংবাদ প্রকাশের জন্য প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি মেনে চলবে। একই সঙ্গে বিবৃতি দেওয়ার আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে চাওয়া প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে।

প্রয়োজন ও বৈষম্যবিরোধী নীতি অনুসারে কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন।