ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হলেও সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত থাকছে

ঝিলম নদীর উরি-২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের একটি দৃশ্য। ৭ মে ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চার দিন পাল্টাপাল্টি প্রাণঘাতী সংঘাত চলার পর আজ শনিবার বিকেলে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তবে যুদ্ধবিরতি হলেও দুই দেশের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত থাকছে। দুই দেশের চারটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত-পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবেশী এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সিন্ধু নদ ও তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ন্ত্রণে সম্মত হয়েছিল।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলার পর সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় নয়াদিল্লি। ভারতের অভিযোগ, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তা নাকচ করেছে।

চাষাবাদের প্রায় ৮০ শতাংশ পানির জন্য সিন্ধু পানিচুক্তির ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তান। তাই ভারতের স্থগিতাদেশের পর দেশটি বলেছে, এ বিষয়ে তারা আন্তর্জাতিক আইনে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পাকিস্তানের পানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ‘সিন্ধু পানিচুক্তি (যুদ্ধবিরতি) আলোচনার অংশ ছিল না।’

ভারত সরকারের একটি সূত্রও রয়টার্সকে জানিয়েছে, সিন্ধু পানিচুক্তির বিষয়ে তাঁদের অবস্থানে ‘কোনো পরিবর্তন হয়নি’।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানের পানি মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পেহেলগামের হামলার পর ভারত-পাকিস্তান অনেকগুলো পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয়। সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত সেসব পদক্ষেপের একটি। অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে স্থলসীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত এবং একে অপরের নাগরিকদের প্রায় সব ধরনের ভিসা প্রদান বন্ধ রাখা অন্যতম।

ভারত সরকারের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সহিংসতা বন্ধ থাকলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া সব ব্যবস্থা বহাল থাকবে। বাণিজ্য ও ভিসাসংক্রান্ত পদক্ষেপগুলোও বলবৎ থাকবে। এ বিষয়ে জানতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে (৭ মে) পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, তারা ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে’ হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘাত চলতে থাকে।

বিভিন্ন পক্ষ যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেয়। তবে বেশি ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার আগে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এরপর ভারত-পাকিস্তান এ বিষয়ে সম্মত হওয়ার কথা জানান।

সম্মতিটা কেমন, তা নিয়ে দুই পক্ষ দুই ধরনের কথা বলছে। পাকিস্তান ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ বললেও সম্মতিটিকে ভারত ‘সব ধরনের গুলি চালানো ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের চুক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছে।