রাহুলের ‘উড়ন্ত চুমু’ নিয়ে লোকসভায় স্মৃতি ইরানির তুলকালাম

পার্লামেন্ট ভবন ত্যাগ করছেন রাহুল গান্ধী। ৯ আগস্ট দিল্লি
ছবি: এএনআই

‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বেড়াল!’ ঠিক যেন সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’! বুধবার লোকসভায় মণিপুর নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা চলছিল, সেখান থেকে নজরটা ধাঁ করে ঘুরে গেল ‘উড়ন্ত চুমু’র দিকে। রাহুল গান্ধী সভাকক্ষ ত্যাগের আগে বিজেপির নেত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়েছেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপির নারী সংসদ সদস্যরা স্পিকার ওম বিড়লার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। নারী সদস্যদের সম্মানহানি করার অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন রাহুলকে।

বুধবার বিতর্কে রাহুল বিদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ‘ঘৃণা’র রাজনীতিকে। মোদিকে তিনি রাবণের সঙ্গে তুলনা করেন। অহংকারী বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে মণিপুরে ভারতমাতাকে হত্যা করার অভিযোগ আনেন। রাহুলের পর ভাষণ দিতে ওঠেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তাঁর বক্তৃতা চলাকালে রাহুল সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। স্মৃতির অভিযোগ, সভা ছেড়ে যাওয়ার আগে রাহুল নাকি তাঁদের দিকে উড়ন্ত চুমু বা ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়ে দিয়েছেন।

স্মৃতি ইরানি তাঁর ভাষণে এই ঘটনার উল্লেখ করেন। রাহুলের ‘খানদান’ বা পরিবারের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁকে ‘নারীবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমন আচরণ সংসদে আগে কখনো দেখা যায়নি।

বিজেপির নারী সংসদ সদস্যরাও কেউ কেউ স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে দেখা করে ওই আচরণের প্রতিবাদ জানান। তাঁরা লিখিতভাবে এক অভিযোগপত্রও জমা দেন, যাতে বলা হয়েছে, স্মৃতি ইরানির ভাষণের সময় রাহুল তাঁর লক্ষ্যে ‘অশোভন আচরণ’ করেছেন। এই আচরণ সভার মর্যাদা ও নারী সদস্যদের জন্য মর্যাদাহানিকর। এ জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। স্মৃতি ইরানি অবশ্য বলেননি, রাহুলের উড়ন্ত চুমুর লক্ষ্য ছিলেন তিনি।

রাহুলের উড়ন্ত চুমু সংসদ টিভির সম্প্রচারে অবশ্য ধরা পড়েনি। সভাকক্ষে উপস্থিত কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সভাকক্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় রাহুলের হাত থেকে কিছু কাগজপত্র পড়ে যায়। সেই সময় সরকার পক্ষের কোনো কোনো সদস্য হাসাহাসি করতে থাকেন। টিপ্পনী কাটতে থাকেন। সেই কাগজপত্র তোলার সময় তিনি ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে উড়ন্ত চুমু দেওয়ার মতো ভঙ্গি করেন।

লোকসভার অধিবেশনে বক্তৃতা করছেন বিজেপি নেত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ৯ আগস্ট দিল্লি
ছবি: এএনআই

বিজেপির ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে রাহুল বারবার সরব হয়েছেন। বুধবারের ভাষণেও বারবার সেই ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালে তিনি শুনিয়েছেন, ‘ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান’ খোলার কথা।

মণিপুর পরিস্থিতি ও প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা ছাপিয়ে হঠাৎই ঘটনাটি বড় হয়ে ওঠে। বিজেপি শুরু করে ‘উড়ন্ত চুমু’র রাজনীতি। নারী সদস্যরা সংবাদমাধ্যমের কাছেও সমবেতভাবে রাহুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, স্পিকারকে বলা হয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে রাহুলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কংগ্রেস ও বিরোধীরা মনে করছেন, মূল বিষয় থেকে চোখ ঘোরাতে, মণিপুরের ব্যর্থতা আড়াল করতে বিজেপি বিষয়টিকে বড় করে তুলে ধরছে। কংগ্রেস সদস্য কার্তি চিদাম্বরম বলেন, এটা বিজেপির কৌশল। রাহুলের ভাষণ থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই তারা এটা করছে। বিজেপির এই আচরণ দুর্ভাগ্যজনক।

কংগ্রেস সদস্য আরাধনা মিশ্র আবার স্মৃতি ইরানিকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, তিনি সংসদে নারীর সম্মানের প্রশ্ন তুলছেন। অথচ মণিপুরে নারীদের বিবস্ত্র করে ঘোরানো ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে একবারও মুখ খোলেননি।

কংগ্রেসের নেতা মানিককম টোগোর বলেন, এটাই স্মৃতি ইরানির সমস্যা। তিনি রাহুলভীতিতে ভুগছেন। তাঁর এই অসুখ সারানো দরকার।

কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যদিও দলের এক নেতা বলেন, কাউকে অসম্মানের প্রশ্নই ওঠে না। রাহুল তাঁর ভাষণে বারবার সবাইকে ‘ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করেছেন। তাঁর ওই ভঙ্গি স্মৃতি ইরানি তো ননই, কোনো বিশেষ মন্ত্রী বা সদস্যের উদ্দেশেও ছিল না।