ভারতে রাজনৈতিক চাপে কাশ্মীরি সাংবাদিকের পুরস্কার বাতিল

কাশ্মীরি সাংবাদিক সাফিনা নবী
ছবি: সাফিনার ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতীয় সাংবাদিক সাফিনা নবীর দুর্ভাগ্য, তিনি কাশ্মীরি। সম্ভবত তাই পুরস্কৃত হয়েও শেষ মুহূর্তে তাঁকে শুনতে হলো পুরস্কারটি বাতিল করা হয়েছে। ‘কেন? হঠাৎ কী হলো?’ বিস্মিত সাফিনা কারণ জানতে চেয়েছিলেন। উত্তর পেয়েছিলেন, ‘প্রবল রাজনৈতিক চাপ।’

অশান্ত কাশ্মীরের এক অন্য আখ্যান তুলে ধরেছিলেন সাফিনা নবী। সাড়ে তিন দশক ধরে সন্ত্রাস-উপদ্রুত কাশ্মীরে নিখোঁজ তরুণদের পরিবার নিয়ে তৈরি করেছিলেন সেই আখ্যান। গবেষণাভিত্তিক সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘স্ক্রোল’-এ। শিরোনাম, ‘হাউ কাশ্মীরস হাফ উইডো’জ আর ডিনায়েড দেয়ার বেসিক প্রপার্টি রাইটস’। হাজার হাজার নিখোঁজ কাশ্মীরি পুরুষের স্ত্রীদের তিনি ‘হাফ উইডো’ বা ‘আধা বিধবা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। প্রতিবেদনে লিখেছিলেন কীভাবে তাঁরা সাধারণ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেই কাহিনি।

কেন? সেটাই ছিল তাঁর গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনের আকর্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে এই নারীদের সম্পর্কে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। সেই নারীরা, নিখোঁজ পুরুষদের হতভাগ্য স্ত্রীরা জানেন না, তাঁদের স্বামী বেঁচে আছেন কি নেই। জানেন না, তাঁরা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কি না। কেউ কেউ আবার বুঝতে পারেন না, এ পরিস্থিতিতে পুনর্বিবাহ করা আইনের চোখে সম্ভব কি না। নতুন সংসার শুরু করা উচিত হবে কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ ভুগছেন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে। অপরাধবোধেও আচ্ছন্ন কেউ কেউ। সাফিনার ‘স্টোরি’ ছিল এই ‘আধা বিধবা’দের সামাজিক ও মানসিক দুরবস্থা নিয়ে। সে কারণেই তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন।

সাফিনাকে পুরস্কার দিয়েছিল মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের মহারাষ্ট্র ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-ওয়ার্ল্ড পিস ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম স্কুল। ১৭ অক্টোবর সেই পুরস্কার নিতে তাঁর পুনে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ ১৬ অক্টোবর তাঁকে ফোন করে জানানো হয়, আসার দরকার নেই। পুরস্কারটি বাতিল করা হয়েছে। বিস্মিত সাফিনা কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, প্রবল রাজনৈতিক চাপ। বলা হয়, ওই পুরস্কারের জন্য তাঁকে মনোনীত করায় রাজনৈতিকভাবে তাঁরা প্রবল চাপে পড়েছেন। তাই পুনে সফর করা তাঁর পক্ষে উচিত হবে না।

সাফিনা নবীকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোন ও ই-মেইল মারফত সেই খবর তাঁকে জানানো হয়েছিল। অভিনন্দিতও করা হয়েছিল। কিন্তু পুরস্কার বাতিলের খবর জানানো হয় ফোনে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ই-মেইল মারফত তাঁকে জানাতে অস্বীকার করে বলে সংবাদমাধ্যমে সাফিনা জানান।

পুরস্কার বাছাই করেছিল সাত সদস্যের জুরিবোর্ড। তাতে তিনজন জুরি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের, বাকি চারজন বাইরের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার পুনে সংস্করণের আবাসিক সম্পাদক সুনন্দ মেহতা, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার কার্টুনিস্ট সন্দীপ আধওয়ারু, বেনেট ইউনিভার্সিটি মিডিয়া স্কুলের প্রধান সঞ্জীব রত্ন সিং ও সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম কে বেণু। তিন জুরি সদস্য পুরস্কার দিতে পুনেতে উপস্থিতও হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ওই খবর জানার পর অনুষ্ঠানে যাননি।

এ বিষয়ে দ্য ওয়্যার সম্পাদক এম কে বেণু নিজের সংবাদমাধ্যমে বলেন, খবরটি শোনার পর তিনি, সুনন্দ ও সন্দীপ ঠিক করেন, অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে তাঁরা প্রতিবাদী হবেন। কাশ্মীরি সাংবাদিকদের এক অন্য ধরনের সেন্সরশিপ ও হয়রানি সহ্য করতে হচ্ছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক ও বিবেকবর্জিত।