পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু, মশা মারতে ড্রোনের ব্যবহার কলকাতায়

ডেঙ্গু দমনে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবুর বাজারে মশারি টানিয়ে প্রতিবাদ করে কংগ্রেস
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।  প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। সরকারি হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যার অভাব। ডেঙ্গু দমনে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে সরব হয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবুর বাজারে মশারি টানিয়ে লোকজনকে নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস।

এসব অভিযোগের মধ্যেই কলকাতা পৌর করপোরেশন গতকাল সোমবার থেকে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরে বন্ধ থাকা কৃষ্ণা গ্লাস কারখানার ওপর ড্রোন চালিয়ে মশা মারার ওষুধ ছিটিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এত দিন ধরে ডেঙ্গুতে মৃত ও সংক্রমণের সংখ্যা চেপে গেছে। গতকাল রাজ্য সচিবালয়ে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব এইচ কে দ্বিবেদি। সেই বৈঠকে মৃতের সংখ্যা স্পষ্ট করা না হলেও ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রাজ্যে ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা বলা হয়েছে—৩৮ হাজার ১৮১ জন।

কিন্তু মৃতের সংখ্যা সেই ৩ জনই রয়েছে। তবে বেসরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৪৩। মুখ্য সচিব রাজ্যের জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের কঠোর হাতে ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হবে। দমন করতে হবে। রাজ্যের ডেঙ্গুর হটস্পটগুলো চিহ্নিত করতে হবে। ডেঙ্গু দমনে উদ্যোগী হতে হবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে। এই লক্ষ্যে এর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে এখন ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়—সংখ্যা ৮ হাজার ৫৩৫ জন। এরপর কলকাতা—৪ হাজার ৪২৭ জন।

মশা মারতে ড্রোনের ব্যবহার

ড্রোন উড়িয়ে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরে বন্ধ থাকা কৃষ্ণা গ্লাস কারখানায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতার যাদবপুরে ১২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে বন্ধ থাকা কৃষ্ণা গ্লাস কারখানা। সেই কারখানা এখন জল আর জঙ্গলে ঢেকে আছে।

ওই বন্ধ কারখানায় গতকাল হঠাৎ চলে যান কলকাতা পৌর করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তিনি ওই পরিত্যক্ত কারখানার বিভিন্ন স্থানে জল জমে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি পৌর এলাকায় বাড়ির আশপাশে জমে থাকা জল অবিলম্বে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন, যাতে ভেতরে মশার লার্ভা সৃষ্টি হতে না পারে।

ডেঙ্গু দমনে কলকাতার সাফল্যের কথা অনেক জনস্বাস্থ্যবিদ উল্লেখ করেন। কলকাতায় মশা নিয়ন্ত্রণে অতীন ঘোষের ভূমিকা আছে। তবে এবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা।

বিজেপির পৌর প্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘বেশি আক্রান্ত ওয়ার্ডগুলোয় ডেঙ্গু নিরাময়ে পৌর স্বাস্থ্য বিভাগ কি আলাদা করে ব্যবস্থা নিয়েছে? কেন বছরের শুরু থেকে পরিত্যক্ত বাড়িগুলোয় জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করেননি ডেপুটি মেয়র? কাজে জোর না দিয়ে সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখানোর জন্য সেপ্টেম্বরে সদলবল রাস্তায় নামলেন?’

গতকাল দক্ষিণ কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেস যদুবাবুর বাজারে মশারি টাঙিয়ে প্রতিবাদ করে। মশারির মধ্যে বিভিন্ন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এ প্রতিবাদে হয়েছে।

কংগ্রেসের পৌর প্রতিনিধি সন্তোষ পাঠক বলেছেন, ‘বলা হচ্ছে, শহরের দক্ষিণে ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল থাকায় ডেঙ্গু বাড়ছে। কিন্তু জোকার এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফাঁকা জমি ছাড়াও আবাসন তৈরি হচ্ছে। সেখানে তো ডেঙ্গু নেই!’

অতীন ঘোষ অবশ্য ব্যর্থতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি বন্ধ করুন। তাঁদের উচিত ভোট-প্রচারের মতো ডেঙ্গু নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া।’