ভারতে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরিতে কী আছে

রণতরিটি তৈরিতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ১৩ বছর
ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনী

ভারতে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরি ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ যাত্রা শুরু করেছে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় আজ শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ রণতরির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতীয় নৌবাহিনীতে ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ কমিশন পাওয়ার প্রাক্কালে রণতরিটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন বিবিসির যুগল পুরোহিত। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

ওজন ৪৫ হাজার টন

‘আইএনএস বিক্রান্ত’ ৪৫ হাজার টন ওজনের একটি রণতরি। রণতরিটি তৈরিতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ১৩ বছর।

রণতরিটি ৮৬০ ফুট লম্বা। আর উচ্চতা ১৯৭ ফুট।

‘আইএনএস বিক্রান্ত’ ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরী, যার নকশা তারা করেছে। রণতরিটি তৈরিও করেছে ভারত।

৩০ যুদ্ধবিমান ধারণে সক্ষম

রণতরিটির ৩০টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধারণের সক্ষমতা রয়েছে।

ভারতের অপর বিমানবাহী রণতরি ‘আইএনএস বিক্রমাদিত্য’ অবশ্য ৩০টির বেশি যুদ্ধবিমান ধারণে সক্ষম।

ইউকে রয়্যাল নেভির এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ প্রায় ৪০টি যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে।

অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনীর নিমিৎজ শ্রেণির রণতরি ৬০টির বেশি যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ রণতরির উদ্বোধন করেন
ছবি: নরেন্দ্র মোদির টুইটার

ব্যয় ২০ হাজার কোটি রুপি

‘আইএনএস বিক্রান্ত’ তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি রুপি।

২০১৭ সালেই ভারতের নৌবাহিনীতে রণতরিটির যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রণতরিটি নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বিলম্বিত হয়। ফলে ভারতের নৌবাহিনীতে রণতরিটির যুক্ত হতে কয়েক বছর দেরি হয়।

দেরি হলেও রণতরিটির কমিশনিং ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, এ ধরনের রণতরি তৈরি করে ভারত তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। এই সক্ষমতা বিশ্বের খুব কমসংখ্যক দেশেরই আছে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা উৎপাদন বাড়াতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তারও একটি সফল বাস্তবায়ন এ রণতরির উদ্বোধন।

নতুন ‘বিক্রান্ত’

‘বিক্রান্ত’ শব্দের অর্থ ‘সাহসী’। নতুন রণতরির এই নাম রাখার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে।

‘বিক্রান্ত’ ছিল ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরি। যুক্তরাজ্য থেকে রণতরিটি কেনা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে রণতরিটি ভারতের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। সেই রণতরি ছিল ভারতের গর্বের প্রতীক। বেশ কিছু সামরিক অভিযানে সেই রণতরিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালেও রণতরিটির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে ১৯৯৭ সালে রণতরিটিকে পরিষেবা থেকে প্রত্যাহার (ডিকমিশনড) করা হয়।

এখন ‘বিক্রান্ত’ নতুন করে ফিরে এল। আজ কমিশন পাওয়া নতুন এই ‘বিক্রান্ত’ ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় জলসীমায় চলাচল করবে। তার সঙ্গী হিসেবে থাকবে ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার ও সাবমেরিনের বহর।

রণতরির ভেতর

‘আইএনএস বিক্রান্ত’ বর্তমানে কেরালার সরকারি মালিকানাধীন কোচিন শিপইয়ার্ডে রয়েছে। সেখানেই রণতরিটি তৈরি করা হয়। সেখানেই আজ রণতরিটির কমিশনিং অনুষ্ঠান হয়।

রণতরিতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ ক্রু সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

উদ্বোধনের প্রাক্কালে এক কর্মকর্তা সাংবাদিক-দর্শনার্থীদের রণতরিটির ‘থ্রটল কন্ট্রোল রুম’ দেখান। এটি রণতরির ‘হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনগুলো পরিচালিত হবে। এখান থেকেই ‘ভাসমান শহরটি’ পরিচালিত হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাই কৃষ্ণান বলেন, রণতরিটিতে থাকা চারটি ইঞ্জিন একসঙ্গে ৮৮ মেগাওয়াট শক্তি তৈরি করে। এই পরিমাণ শক্তি একটি শহরের জন্য যথেষ্ট।

রণতরিটিতে তিনটি গ্যালি বা প্যান্ট্রি রয়েছে। সেখানে কফি বানানোর যন্ত্র, টেবিল ও চেয়ার আছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি যদি এই গ্যালিগুলোকে এক করেন, তাহলে প্রায় ৬০০ জন ব্যক্তি একসময়ে এখানে তাঁদের খাবার খেতে পারবেন।’

রণতরিটিতে একটি ১৬ শয্যার হাসপাতাল আছে। আছে দুটি অস্ত্রোপচার কক্ষ। এ ছাড়া আছে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট।

রণতরিটির হ্যাঙ্গারে রাশিয়ায় তৈরি দুটি যুদ্ধবিমান দেখা যায়। যার মধ্যে একটি মিগ-২৯কে ফাইটার।

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিজয় শিওরান বলেন, এটা একটি পার্কিংয়ের জায়গার মতো। এখানে একটি দল উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করবে। এখান থেকেই বিশেষ লিফট উড়োজাহাজকে ফ্লাইং ডেকে নিয়ে যাবে।

ভারতীয় নৌবাহিনী চলতি বছরের শেষ দিকে রণতরিটি থেকে নিবিড় ‘ফ্লাইং অপারেশন’ পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে।

ফ্লাইট ডেক অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিদ্ধার্থ সোনি বলেন, তাঁদের ফ্লাইট ডেকের আকার প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। তাঁরা একবারে ১২টি যুদ্ধবিমান ও ৬টি হেলিকপ্টার চালাতে পারবেন।

আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে

ভারতের এখন দুটি বিমানবাহী রণতরি হলো। একটি আইএনএস বিক্রমাদিত্য, অপরটি আইএনএস বিক্রান্ত।

কোচিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধু নায়ার বলেন, যদিও কাজ শেষ করতে অনেকটা দেরি হয়েছে, তা সত্ত্বেও নিজেরাই রণতরি নির্মাণ করতে পারার বিষয়টি তাঁদের আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে।