সাত বছরের শিশু, তার মাকে পুড়িয়ে মারা হলো মণিপুরে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মণিপুর সফরের পরে উত্তর–পূর্ব ভারতের সীমান্তবর্তী এই রাজ্যে সহিংসতা কমছে না। বরং তা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নৃশংস এক হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। যদিও ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নয়, এমন সম্প্রদায় অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের দুই হাজার জনতার উন্মত্ত দল একটি অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করে সাত বছরের এক শিশু, তাঁর মা এবং এক আত্মীয়কে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।

এ ঘটনা গতকাল সামনে আসার পরে, আজ বুধবার দিল্লিতে কুকি সংগঠনের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। নারীরাও এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হবে। সাধারণত, বিজেপির নেতারা এ ধরনের দাবি অগ্রাহ্য করেন। কিন্তু চাপের মুখে বুধবার অমিত শাহ বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেন।

রোববারের ঘটনায় নিহত সাত বছরের শিশুর নাম টনসিং হ্যাংসিং, তার মা মীনা হ্যাংসিং (৪৫) এবং তাঁদের এক আত্মীয় লিডিয়া লোরেম্বাম (৩৭)। তারা মণিপুরের সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে বাস্তুহারা হয়ে পশ্চিম ইম্ফল জেলার কাংচুপ নামের গ্রামে আসাম রাইফেলসের এক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রোববার দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। ইম্ফলের উপকণ্ঠে এক জায়গায় তাঁদের আটকায় উন্মত্ত জনতা। স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, পুলিশের সামনেই তাদের ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মীনা হ্যাংসিং একজন মেইতেই খ্রিষ্টান। তিনি কুকি সম্প্রদায়ের একজনকে বিয়ে করেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগের কারণে অপর যে আত্মীয় লিডিয়া মারা যান। তিনিও একজন মেইতেই খ্রিষ্টান। ওই শিবিরে বর্তমানে কুকি সম্প্রদায়ের আরও মানুষ রয়েছেন।

মণিপুরের দাঙ্গা সম্পর্কে বারবার বলা হয়েছে নৃগোষ্ঠী নয়, এমন সম্প্রদায় অর্থাৎ মেইতেদের সঙ্গে কুকিসহ অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর জাতিগত দাঙ্গা চলছে ওই রাজ্যে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও মণিপুরের ঘটনাকে ‘জাতিগত সহিংসতা’ বলে গত সপ্তাহে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে হিন্দু মেইতেই সম্প্রদায়ের হাতে মেইতেই সম্প্রদায়েরই খ্রিষ্টানদের মৃত্যু হচ্ছে। এর থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, এটি আর শুধু জাতিগত সহিংসতায় সীমাবদ্ধ নেই, একটি পরিপূর্ণ সম্প্রদায়িক সংঘর্ষে (হিন্দু বনাম খ্রিষ্টান) পরিণত হয়েছে। এখন ভারতের অন্যান্য পত্রপত্রিকাতেও এটিকে জাতিগত সহিংসতার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সংঘাত বলেও বর্ণনা করা হচ্ছে।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের তরফে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, টনসিং, মীনা এবং লিডিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে মেইতেই নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারণ, আত্মীয়রা মনে করেছিলেন, মেইতেই হওয়ার কারণে সমাজের মানুষ তাঁদের আক্রমণ করবেন না। কিন্তু দেখা গেল, তাঁরা আক্রান্ত হলেন। তাঁদের এক আত্মীয় বলেছেন, ‘মৃতদেহগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল, ছাইয়ের মধ্যে শুধু কিছু হাড় পাওয়া গেছে।’

এ ঘটনা এবং মঙ্গলবার ভোরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যের বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর কারণে পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কায় মণিপুরে বাড়তি সেনাবাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে।