দিল্লিতে মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

মাঙ্কিপক্স
ছবি: রয়টার্স

ভারতে কোভিডের ‘বোঝার’ ওপর ‘শাকের আঁটি’ হয়ে আবির্ভাব ঘটেছে মাঙ্কিপক্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই সংক্রমণকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা বলে ঘোষণার পরদিনই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে এ নিয়ে চতুর্থ ব্যক্তির শরীরে এই সংক্রমণ পাওয়া গেল। আতঙ্কের বিষয় হলো, প্রথম তিন ব্যক্তি বিদেশ থেকে ফিরলেও চতুর্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন দেশে থেকেই। ফলে উদ্বেগের মাত্রা আরও বেড়েছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল রোববার বলেছেন, দিল্লিতে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির খবর পাওয়া গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বিমানবন্দরগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, মাঙ্কিপক্স রোধে বিদেশফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও তেমন বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।

ভারতে প্রথম সংক্রমিত তিন ব্যক্তি দক্ষিণের রাজ্য কেরালার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে দুজন এসেছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, একজন দুবাই থেকে। সরকারি সূত্রের বরাতে একাধিক সংবাদ সংস্থা বলছে, ভারতে চতুর্থ যে ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে, তিনি পশ্চিম দিল্লির বাসিন্দা। বয়স ৩১ বছর। দিনকয়েক আগে হিমাচল প্রদেশের পর্যটনকেন্দ্র মানালিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের পুনের পরীক্ষাগারে তাঁর নমুনা পাঠানো হয়েছিল। রিপোর্ট পজিটিভ।

ভারতে করোনার সাম্প্রতিক ঢেউ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই চতুর্থ ঢেউয়ে প্রতিদিন দেশে ২০ থেকে ২২ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিল্লির করোনা পরিস্থিতি যৌথভাবে তদারক করে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করে দেওয়া টাস্কফোর্স। দুই তরফেই স্বীকার করা হয়েছে, সংক্রমণের ক্ষমতা সেভাবে না কমলেও চতুর্থ ঢেউয়ে রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কম। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও নগণ্য। অধিকাংশ মানুষই চতুর্থ ঢেউকে সাধারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বলে ধরে নিচ্ছে। বেশির ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি পরীক্ষাও করছেন না। এক সর্বভারতীয় প্যাথলজিক্যাল সংস্থার পক্ষে ধীরেন্দ্র দুবে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মনে কোভিডের আতঙ্ক যথেষ্ট কমে গেছে। সে কারণে অধিকাংশ রোগী কোভিড পরীক্ষা করছেন না। পরীক্ষার খরচ সরকার যথেষ্ট কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তবু পরীক্ষার হার কমে ১০ শতাংশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মোট ৭৫টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ। সম্প্রতি এই রোগ ধরা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে, গত ৭ মে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রথম খোঁজ মিলেছিল ১৯৫৮ সালে। ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে প্রথমবার মানবদেহে এ ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসের খোঁজ মেলে। কিন্তু কখনো এবারের মতো রোগটা ছড়ায়নি। রোগের উপসর্গ কাঁপুনি, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা ও গলা-বগল-কুঁচকিতে থাকা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া।