ভারতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটিতে রাখা হচ্ছে না প্রধান বিচারপতিকে

লোকসভা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতে বিরোধীদের প্রবল চাপের মুখে অবশেষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি প্রকাশ করা হলো। গতকাল বুধবার এ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের কথা জানানোর পর রাতে লোকসভার বুলেটিনে আলোচ্যসূচি প্রকাশ করা হয়। ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে।

লোকসভার বুলেটিন অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর আলোচনা করা হবে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের সংসদীয় ব্যবস্থার সাফল্য, অভিজ্ঞতা ও তার শিক্ষা নিয়ে। এ আলোচনা ছাড়া যে বিলগুলো আনা হবে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল দেশের নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ। এত দিন ধরে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করার কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার বিরোধী নেতার সঙ্গে ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি। নতুন বিলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে রাখা হয়নি।

বিচারব্যবস্থার সঙ্গে দেশের সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে। প্রধান বিচারপতিকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সেই টানাপোড়েনেরই ফল। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও বদলির সিদ্ধান্ত নেয় সর্বোচ্চ আদালতের কলেজিয়াম ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও সেই ব্যবস্থায় আইনসভার প্রতিনিধিদের মতামত দেওয়ার সুযোগ দিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজি নন। এরই পাল্টা হিসেবে কেন্দ্রও নির্বাচন কমিশনার নিযুক্তির প্রক্রিয়া থেকে সুপ্রিম কোর্টকে বাদ দিতে চাইছে বলে বিরোধীদের দাবি।

সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরুর আগের দিন, অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ‘সত্যের প্রতিরূপ ও সৃষ্টিশক্তির দেবতা’ বিশ্বকর্মার পূজার দিনও সেটি। কাজেই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন সংসদ ভবনে প্রথমবারের মতো তোলা হবে জাতীয় পতাকা।

বিজেপি ইতিমধ্যেই জি–২০–এর সফল সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে। সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনের অন্যতম লক্ষ্যও মোদির নেতৃত্বে সার্বিক সাফল্যের উদ্‌যাপন।

বিশেষ অধিবেশন শুরু হবে পুরোনো সংসদ ভবনে। ১৮ সেপ্টেম্বর সেখানে সেন্ট্রাল হলে স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সংসদীয় ব্যবস্থার সাফল্য, অভিজ্ঞতা ও তা থেকে শিক্ষাসংক্রান্ত আলোচনা শেষে পুরোনো সংসদকে বিদায় জানানো হবে। পরের দিন থেকে অধিবেশন বসবে নতুন সংসদ ভবনে।

এযাবত ভারতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন যতবার ডাকা হয়েছে, প্রতিবারই আগে থেকে আলোচ্যসূচি জানানো হয়েছে। যেমন ১৯৬২ সালের আলোচ্য বিষয় ছিল চীনা আক্রমণ। ১৯৭২ সালে ডাকা হয়েছিল স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনের জন্য। ১৯৯২ সালের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল ‘ভারত ছাড় আন্দোলন’–এর ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করতে। ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে। ২০১৭ সালে এক দিনের জন্য মধ্যরাত্রে অধিবেশন ডাকা হয় সারা দেশে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রচলনে। কিন্তু এবার অধিবেশন টানা পাঁচ দিনের। অথচ এত দিন ধরে আলোচ্যসূচি কী, তা গোপন রাখা হয়েছিল। ফলে উড়ছিল জল্পনার নানা ধরনের ফানুস।

সেই জল্পনার মধ্যেই বিরোধীরা জানিয়ে রেখেছিলেন, বিশেষ অধিবেশনে তাঁরা অবশ্যই অংশ নেবেন।

কিন্তু সেখানে গুরুতর সমস্যা ও প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার দাবি জানাবেন। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, তীব্র বেকারত্ব, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতা, মণিপুরের অবিরাম সহিংসতা ও অস্থিরতা। আর প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সম্পর্ক। এসব প্রশ্নের জবাব মোদি আজ পর্যন্ত দেননি। সংসদের বিশেষ অধিবেশনেও সেই জবাব পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।