ভারত বিশ্বকাপে হরদীপ হত্যার বদলা নেওয়ার হুমকি দিলেন খালিস্তানি নেতা

হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। খালিস্তান আন্দোলনের নেতারাও নানাভাবে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন
ফাইল ছবি: এএফপি

কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের নেতা শিখ হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার বদলা বিশ্বকাপের আসরে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ভারতে নিষিদ্ধ শিখ সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)। ওই সংগঠনের নেতা গুরপতবন্ত পান্নুন এক বার্তায় এই হুমকি দিয়ে বলেছেন, ৫ অক্টোবর গুজরাটের আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই ওই বদলা নেওয়া হবে। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে সেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
 
পান্নুনের ওই অডিও বার্তা কবে, কোথায় রেকর্ড করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিশদ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ইংরেজিতে দেওয়া ওই বার্তা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে। তাতে কানাডাবাসী খালিস্তানি আন্দোলনের ওই নেতা বলেছেন, ‘৫ অক্টোবর থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হবে না, শুরু হবে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ কাপ।’

অবশ্য পরক্ষণেই ভারতের উদ্দেশে পান্নুনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘শহীদ নিজ্জরের হত্যার বদলা আমরা নেব। তোমাদের (ভারতের) বুলেটের জবাব দেবে আমাদের ব্যালট।’

পান্নুন ভারতে ১৬টি গুরুতর ফৌজদারি মামলার আসামি। সম্প্রতি পাঞ্জাবে তাঁর বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকার ওই ব্যবস্থা নেওয়ার পরেই তাঁর এই অডিও বার্তা ভাইরাল হয়। নিহত নিজ্জরের সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ পান্নুনের দল ‘এসএফজে’র মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্বে ছিল। ভারতে এই দুই সংগঠনই নিষিদ্ধ।

বিশ্বকাপের আসর ঘিরে এমনিতেই ভারতে নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে গুজরাটে। সেখানে ভারত ও পাকিস্তানের খেলা হবে। পাকিস্তানি দল ইতিমধ্যেই ভারতে পৌঁছেছে। পান্নুনের এই হুঁশিয়ারির ফলে নিরাপত্তাব্যবস্থা ও সতর্কতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, এনআইএ ওই অডিও ক্লিপিংয়ের সত্যতা যাচাই করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।

ওই বার্তায় এ কথাও বলা হয়েছে, ভারত নাকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অপমান করেছে। তিনি পান্নুন বলেছেন, এসএফজে এর বদলা নেবে। ভারতকে ফল ভোগ করতে হবে। ‘এক্স’ হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) মারফত পান্নুন ওই অডিও বার্তা গত বুধবার প্রচার করেছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার দায় পান্নুন চাপিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর। বার্তায় তিনি বলেছেন, ভারত অটোয়ার দূতাবাস বন্ধ করে কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে নিক।

ভারত–কানাডা সম্পর্ক অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে শিখ সম্প্রদায়ের খালিস্তান আন্দোলন ঘিরে। কানাডায় বসবাসরত শিখ অভিবাসীদের একটা অংশ পৃথক শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের সমর্থক। সাম্প্রতিককালে সেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সে দেশে যথেষ্ট সক্রিয়। তাদের এই সক্রিয় তৎপরতার রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দল ক্ষমতায় টিকে রয়েছে শিখদের দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে। ওই দলের নেতা জগমিৎ সিং খালিস্তানের সমর্থক বলে ভারত মনে করে।

কারও কারও মতে, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি শিখদের খালিস্তান আন্দোলনের রাজনৈতিক শাখা। এই সমর্থনের কারণেই ট্রুডো ক্রমেই খালিস্তানিদের হাতের পুতুল হয়ে গেছেন বলে ভারতের ধারণা। বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি ভারতের চোখে সে দেশের ‘চিহ্নিত’ বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এমনকি নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও কানাডা সরকার একজনকেও ভারতে প্রত্যর্পণ করেনি।

জাতিসংঘের আসরে যোগ দিতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার নিজেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কানাডার বিরুদ্ধে শিখ নেতাদের প্রশ্রয় দেওয়া অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, এসব কাজ ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ হতে পারে না।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ নিজেই তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সে দেশের সংসদে এক বিবৃতিতে তিনি এই গুরুতর অভিযোগ করেন। যদিও ভারত তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। ট্রুডো ভারতকে তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছে।

ভারত অবশ্য পাল্টা বলেছে, কানাডা নিজ্জর হত্যাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ তাদের দিক। এই কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ভারতের পক্ষে তাঁদের সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
সম্পর্কের এই সার্বিক অবনতির মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত জয়শঙ্কর বৈঠক করবেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে। এই বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করেই নিজ্জর হত্যায় ভারতের হাত থাকার সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।