সিএএ কার্যকর হতে দেব না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ায় জনসভায় বক্তব্য দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, তাঁর রাজ্যে এই আইন তিনি বাস্তবায়িত হতে দেবেন না।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ার বাণীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে সিএএর বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থানের কথা জানান মমতা।

লোকসভা ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিএএ কার্যকর করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। গত চার বছর নিয়ম করে ওই আইনের নিয়মবিধি তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সময় বাড়িয়ে আসছিল।

২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার এ আইন পাস করেছিল। আইনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, এ আইনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আইনটি সারা দেশে চালু হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করার ফলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই ওই তিন দেশ থেকে ভারতে আসা বাসিন্দারা নাগরিকত্ব পেতে আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদন করতে হবে অনলাইনে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেছেন, ‘এ আইন ছুড়ে ফেলে দিন। এ আইন বিজেপির, বাংলা ভাগ করার। বাঙালিদের দেশ থেকে তাড়ানোর এক অভিসন্ধি। আমরা মানি না, মানছি না এই আইন।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এই আইন ধর্মবিদ্বেষকে, বর্ণবিদ্বেষকে উসকে দেবে। মমতা বলেন, ‘ওরা বাঙালিদের সহ্য করতে পারে না, বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য এই আইন এনেছে।’

বিজেপির নাম নিয়ে মমতা বলেন, ‘ওরা এক ভয়ানক দল। কুৎসিত দল। ওরা আসলে হিন্দুদের মানে না। ওরা রামকৃষ্ণ, সারদা মা, পঞ্চানন বর্মা, মতুয়া ঠাকুরদের মানে না। আমাদের এই বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করতে চায় ওরা। শুধু পারে না আমার সঙ্গে। ওরা আমাকে লাঠি দেখালে আমি ডান্ডা দেখাব।’

মমতা জোরের সঙ্গে বলেন, ‘এটা বিজেপির লুডো খেলার ছক। বিজেপি চাইছে এ নিয়ে বাংলায় অশান্তি তৈরি করতে। আমরা এই বাংলায় সেই সুযোগও দেব না।’

সিএএর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার দৃঢ় অবস্থান থাকলেও এই আইন কার্যকর হওয়ার খবরে খুশির হাওয়া বইছে মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে। মতুয়াদের কেন্দ্রীয় তীর্থক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগরে খুশির জোয়ার।

সম্প্রতি মতুয়া সম্প্রদায়রের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ঘোষণা দেন, লোকসভা নির্বাচনের এক দিন আগে হলেও এই আইন কার্যকর হবে ভারতজুড়ে। তবে এই আইন কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঠাকুরনগরের মতুয়া নেত্রী ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মমতাবালা ঠাকুর বলেছেন, এটা বিজেপির রাজনৈতিক খেলা। ভোটের খেলা।