ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির তিনজনই আদানির সুবিধাভোগী

ভারতের আহমেদাবাদে আদানি গ্রুপের ভবন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্টের করে দেওয়া কমিটি পুনর্গঠনের আরজি জানানো হয়েছে। মামলার এক আবেদনকারীর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া ছয়জনের বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্যে অন্তত তিনজন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁরা আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। এ তদন্তের সঙ্গে তাঁদের স্বার্থের সংঘাত হতে পারে। কাজেই নতুন কমিটি গড়া হোক।

আবেদনকারীর আরজি, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের কাজ ঠিকভাবে করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ উঠবে। আস্থার অভাব দেখা দেবে। কাজেই এমন একটা কমিটি তৈরি করা হোক যাঁদের আইন, অর্থনীতি ও স্টক মার্কেট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে এবং যাঁদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা কারচুপির অভিযোগের তদন্ত করতে চলতি বছরের ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক বিচারপতি এ এম সাপ্রে।

আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কমিটি পুনর্গঠনের এই আবেদন করেন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্যতম মামলার অন্যতম বাদী অনামিকা জয়সোয়াল। ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির মধ্যে তিনি আপত্তি জানিয়েছেন তিনজনের বিরুদ্ধে। ওই তিনজনের একজন রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও পি ভাট। আবেদনকারী বলেছেন, ও পি ভাট বর্তমানে ‘গ্রিনকো’ নামে এক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থার চেয়ারম্যান। ওই সংস্থা ২০২২ সাল থেকে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তারা আদানি সংস্থাকে বিদ্যুৎ জোগান দেয়।

আবেদনকারী আরও বলেছেন, পলাতক শিল্পপতি বিজয় মালিয়াকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের মার্চে সিবিআই ও পি ভাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ভাট সেই সময় স্টেট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

আপত্তি উঠেছে তদন্ত কমিটির সদস্য কে ভি কামাথকে নিয়েও। কামাথ ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেসরকারি আইসিআইসিআই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআরে কামাথের নাম ছিল বলে আবেদনকারী জানিয়েছেন। ওই ব্যাংকের সিইও চন্দা কোচারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে।

তৃতীয় আপত্তি তদন্ত কমিটির সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সোমশেখর সুন্দরেশনকে নিয়ে। অভিযোগ, তিনি একাধিক মামলায় আদানি গোষ্ঠীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সওয়াল করেছেন। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’ বোর্ডেও তিনি আদানি গোষ্ঠীর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথিও তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিয়েছেন।

অনামিকা জয়সোয়ালের আবেদন, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে এঁদের সংস্রব তদন্ত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করছে। দেশের মানুষের আস্থা এই কমিটি অর্জন করতে পারবে না, এই ঘনিষ্ঠতার কারণেই। কাজেই নতুন কমিটি গঠন করা হোক।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এম সাপ্রে নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সাবেক বিচারপতি জে পি দেওধর ও ইনফোসিস–এর সহ–প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকেনি।