রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় আসছেন সোনিয়া গান্ধী

কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীফাইল ছবি: এএনআই

লোকসভার সঙ্গে প্রায় সিকি শতকের সংস্রব ছেড়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবার রাজ্যসভায় আসতে চলেছেন। শারীরিক অসুস্থতার দরুন লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর ঝক্কি না নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার তিনি রাজ্যসভার সদস্য হতে চলেছেন। সে জন্য অনেক ভাবনাচিন্তার পর রাজস্থানকে তিনি বেছে নিয়েছেন। এ রাজ্য থেকে এর আগে রাজ্যসভায় এসেছিলেন মনমোহন সিং। অসুস্থতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নেবেন না।

আজ বুধবার সকালে সোনিয়া গান্ধী রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর রওনা হন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, ছেলে রাহুল গান্ধী ও রাজস্থানের দুই শীর্ষ নেতা অশোক গেহলট ও শচীন পাইলট উপস্থিত থাকবেন। রাহুল মাকে সঙ্গ দেবেন বলে আজ ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারই তিনি ছত্তিশগড় থেকে দিল্লি চলে আসেন।

২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার মোট ৫৬ আসনে নির্বাচন। ১৫ রাজ্য থেকে এই আসনগুলো খালি হচ্ছে। এই ৫৬ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯ থেকে ১০টি আসন জিততে পারে। রাজস্থান থেকে খালি হচ্ছে দুটি আসন। তার একটি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মনমোহন সিং। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি সরে দাঁড়ানোয় সেই আসন থেকে জিতে রাজ্যসভায় যাবেন সোনিয়া। রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম তিনি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা ছেড়ে উচ্চকক্ষের সদস্য হতে চলেছেন। বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যসভার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

রাজনীতিতে অনিচ্ছুক সোনিয়া স্বামী রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেসের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। ১৯৯৯ সালে তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন একই সঙ্গে উত্তর প্রদেশের আমেথি ও কর্ণাটকের বেল্লারি লোকসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে। পরে তিনি আমেথি রেখে বেল্লারি আসনটি ছেড়ে দেন। ২০০৪ সালে ছেলে রাহুলের জন্য আমেথি ছেড়ে তিনি চলে যান পাশের কেন্দ্র রায়বেরিলিতে। সেই থেকে রায়বেরিলি থেকেই তিনি লোকসভায় জিতে আসছিলেন।

সোনিয়ার এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসছে তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে সেই অমোঘ প্রশ্ন—তাহলে কি রায়বেরিলি থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদেরা কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চলেছেন? প্রিয়াঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন বেশ কিছু দিন আগেই। উত্তর প্রদেশের দায়িত্বও তিনি সামলেছেন। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কখনো ভোটে দাঁড়াননি। রায়বেরিলি থেকে এবার তিনি প্রার্থী হবেন কি না, সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে থেকে পাওয়া যায়নি। যেমন জানা যাচ্ছে না, গত ভোটে আমেথিতে হেরে যাওয়া রাহুল আগের বারের মতো এবারেও কেরলের ওয়েনাডের সঙ্গে আমেথি থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, সবকিছু স্পষ্ট হবে উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে আসন-সমঝোতা চূড়ান্ত হলে।

সাবেক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। সেই অর্থে সোনিয়া হতে চলেছেন রাজ্যসভায় গান্ধী পরিবারের দ্বিতীয় প্রতিনিধি।

শারীরিক কারণে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর ঝুঁকি ও ঝক্কি সোনিয়া যে নেবেন না, তা অনেক দিন আগে থেকেই সবার জানা ছিল। ২০১৯ সালের ভোটের পর তিনি নিজেও তা জানিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু জানা ছিল না কোন রাজ্য থেকে তিনি রাজ্যসভায় আসবেন। কর্ণাটক নির্বাচনে জেতার পর সেই রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব সোনিয়াকে প্রথম এই প্রস্তাব দেন। একই প্রস্তাব আসে হিমাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও রাজস্থান থেকেও।

কংগ্রেস নেতৃত্ব অনেক ভাবনাচিন্তার পর মরুরাজ্য রাজস্থানকেই বেছে নেয়। রাহুল লোকসভায় জিতেছেন কেরল থেকে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভায় এসেছেন। সোনিয়া কর্ণাটক বা তেলেঙ্গানা থেকে সংসদের উচ্চকক্ষে এলে এমন একটা প্রচার হতো যে সারা দেশের মধ্যে কংগ্রেস শুধু দাক্ষিণাত্যেই টিকে আছে। রাজনৈতিক দিক থেকে সেটা হতো ভুল বার্তা।

কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা কমলনাথ নিজে মধ্যপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সে কারণে দিনকয়েক আগে তিনি সোনিয়ার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কমলনাথ তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা ছেলে নকুলকে ছেড়ে দেওয়ার আরজিও সোনিয়ার কাছে রেখেছেন। গত বিধানসভা ভোটের সব দায়িত্ব কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব কমলনাথের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ হন। প্রবীণ এই নেতাকে রাজ্যসভায় টিকিট না দিলে তিনিও বিজেপিতে চলে যেতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে। সেই জল্পনা কমলনাথকে ঘিরে অন্য এক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।