ট্রেন বন্ধ করায় ভোট দিতে পারলেন না আসামের বিপুলসংখ্যক বাঙালি মুসলমান

ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ায় ভারতের আসাম রাজ্যের লামডিং স্টেশনে আটকা পড়েন অসংখ্য যাত্রী। ২৫ এপ্রিলছবি: আসামের সাংবাদিক রকিবুজ জামানের এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ–লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিন জেলা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি এবং কাছাড়ে মুসলমান সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই ভোট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পাওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। আর সেই কারণেই আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় তাঁরা যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে জন্য ভারতীয় রেল একাধিক ট্রেন বাতিল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, গোটা বরাক উপত্যকায় মুসলমান জনসংখ্যা ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে করিমগঞ্জে ৬০, হাইলাকান্দিতে ৫৬ এবং কাছাড়ে ৩৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাব থেকে পাওয়া। বরাক উপত্যকায় বর্তমানে মুসলমান জনসংখ্যা আরও অনেকটাই বেশি বলে ধারণা করা হয়।

আসামের নাগরিক সমাজের একাংশ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দল মুসলমান প্রধান অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) অভিযোগ করেছে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মূলত মুসলমান পরিযায়ী শ্রমিক বরাক উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ একাধিক ট্রেন বাতিল করে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছে, যাতে তাঁরা ভোট দিতে না পারেন।

আসাম রাজ্যে ১৪ আসনের মধ্যে আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় পাঁচ আসনে ভোট হচ্ছে। এই পাঁচ আসনের মধ্যে বরাকের তিনটি আসন ২০১৯ সালে করিমগঞ্জ, শিলচর এবং স্বশাসিত পরিষদ বিজেপি পেয়েছিল। এই তিন আসন পাওয়ার সম্ভাবনা এবার প্রায় নেই বলেই কিছুদিন আগে আসামে বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতা মন্তব্য করেছেন।

আসামের সাংবাদিক রকিবুজ জামান সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘বিরাট সংখ্যক ভোটার, যাঁরা প্রধানত মুসলমান, তাঁরা করিমগঞ্জে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার মধ্যে (গতকাল) ছয়টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অন্তত ৫-১০ হাজার মানুষ আর এগোতে পারছেন না। ট্রেন বাতিলের কারণে তাঁরা আর ভোট দিতে পারবেন না।’

যেসব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—আগরতলা–গুয়াহাটি স্পেশাল, গুয়াহাটি–শিলচর এক্সপ্রেস, শিয়ালদা–আগরতলা–কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, ফিরোজপুর–আগরতলা এবং কুরলা/মুম্বাই আগরতলা এক্সপ্রেস। শিলচর এবং আগরতলা যাওয়ার আরও সাতটি ট্রেন ‘টার্মিনেট’ বা স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে শিলচর ও আগরতলায় যাওয়ার আরও দুটি ট্রেন এবং গুয়াহাটি শিলচর এক্সপ্রেসের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে।

ট্রেন বাতিলের এ ঘটনায় অন্যতম প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ নিন্দা জানিয়েছে। দলটির এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁদের বিরাট সংখ্যক ভোটার আসতে পারছেন না। এই বিরাট সংখ্যক ভোট আটকে আসামে গণতন্ত্রকে গলা টিপে মারছে বিজেপি।

তবে আটকে থাকা ভোটারদের তাঁদের জেলায় এনে ভোট দেওয়ানোর ব্যবস্থা কিন্তু বিরোধী দল কংগ্রেস বা এআইইউডিএফ এখনো চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক রকিবুজ জামান।

অবশ্য ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রেন বাতিল ও স্থগিতের নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে এক বিবৃতিতে বলেছেন, উত্তর সীমান্ত রেলওয়ের অধীনে লামডিং ডিভিশনে (মধ্য–পূর্ব আসাম) জাতিঙ্গা লামপুর ও নতুন হারঙ্গাজাও স্টেশনের মধ্যে একটি ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। রেলের কর্মী ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাঙালি–অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় এবার বিজেপির জেতার সম্ভাবনা কম। কারণ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। এই আইনে উপত্যকার বড় অংশের হিন্দু ও মুসলমান—দুই সমাজই অসন্তুষ্ট বলে একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দিন কয়েক আগে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাই বলেছেন, এখনো মাত্র একজন সংশোধিত আইনের আওতায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।

আইনটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে গত ৮ মার্চ। অর্থাৎ গত দেড় মাসের বেশি সময় আসামে হিন্দু বা অন্য সমাজের মানুষ এই আইনে নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করেননি। এ কারণেই মনে করা হচ্ছে, আইনের বিরোধিতায় বরাক উপত্যকার বড় অংশের ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে।