ভারতের আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস একা লড়বে ২৫৫ আসনে, বাকিগুলোয় ‘ইন্ডিয়া’
দলীয় শক্তি ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বিচার করে ভারতের আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দলটি ২৫৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি আসনগুলোয় সমর্থন জানাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রার্থীদের। বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতার আনুষ্ঠানিক আলোচনা অতি দ্রুত সেরে ফেলা হবে।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি দিনকয়েক আগে ৫ সদস্যের এক কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল। সেই কমিটি গত কদিন ধরে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী ও এআইসিসির সাংগঠনিক সচিব কে সি বেনুগোপাল। সেখানেই ওই কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়। তার ভিত্তিতে ঠিক হয়েছে, আগামী লোকসভা ভোটে কংগ্রেস মোটামুটিভাবে ২৫৫ আসনে লড়বে। রাজ্যে রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলার নির্দেশও ওই কমিটিকে দেওয়া হয়। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করে ফেলতে। চলতি বছরের মে মাসে ভারতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৪২১ আসনে। জিতেছিল মাত্র ৫২টিতে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ‘বাস্তব পরিস্থিতি’ বিচার করে এবার দল ২৫৫টির মতো আসনে মনোনিবেশ করবে। রাজ্যে রাজ্যে সেই আসনগুলো বাছা হয়েছে, যেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক হয়েছে শুধু লড়াইয়ের জন্য প্রার্থী দেওয়ার মানসিকতা দল এবার ত্যাগ করবে। সব কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে না।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি বিচারের সময় দল তিনটি বিষয় বিবেচনা করেছে। দলীয় শক্তি, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং অর্থের জোগান। তিনি বলেন, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, আসাম, উত্তরাখন্ডের মতো যে রাজ্যগুলোয় বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই, সেখানে অধিকাংশ আসনে কংগ্রেসই লড়বে। এই সব রাজ্যে যদি দেখা যায় কোনো কোনো কেন্দ্রে স্থানীয় কোনো দলের প্রভাব রয়েছে, সে ক্ষেত্রে রাজ্য পর্যায়ে দু–একটি আসন ওই দলকে ছাড়া হতে পারে। কেরলে লড়াই কংগ্রেস ও সিপিএম জোটের মধ্যে। সেখানে পরিস্থিতি বিচারে দুই দল আলোচনায় বসবে। বিহার, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কংগ্রেস আগে থেকেই জোটের শরিক। সেখানে বাস্তব পরিস্থিতি বিচারে আসনের দাবি জানানো হবে। এই রাজ্যগুলো ছাড়া রয়েছে উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য, যেখানে দল যথেষ্ট হীনবল। ওই শীর্ষ নেতার কথা অনুযায়ী, এই ধরনের রাজ্যে নিছক লড়াইয়ের জন্য দল প্রার্থী না দেওয়ার পক্ষে। দলীয় শক্তি ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে।
ওই নেতার মতে, তৃতীয় বিষয়টি অর্থসংক্রান্ত। সব আসনে লড়াইয়ের মতো আর্থিক সংগতি এখন দলের নেই। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত ওঠা টাকার সিংহভাগই বিজেপির। অন্যরা যাতে বেশি অর্থ না পায়, সে জন্য বিজেপি নানাভাবে সচেষ্ট। সব মিলিয়ে তাই কমবেশি ২৫৫ আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত।
আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও পাঞ্জাবে। এই তিন রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে একটা নির্বাচনী বোঝাপড়া রয়েছে। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস শুধু কংগ্রেসকে তাদের জেতা দুটি আসন ছাড়তে রাজি। কীভাবে এই জট ছাড়াবে তা অজানা। দিল্লিতে ৭টি আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টি গতবার ২টি আসন ছাড়তে চেয়েছিল। কংগ্রেস চেয়েছিল ৩টি। মিটমাট না হওয়ায় ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপি ৭ আসনেই জয়ী হয়। তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধ বেধেছিল গোয়া, মণিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের সময়েও। কংগ্রেসের ওই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতার আলোয় এবার লোকসভা ভোটে বিজেপিবিরোধী সব পক্ষেরই বাস্তবোচিত আচরণ করা উচিত। কংগ্রেস তা করতে প্রস্তুত।’