ভারতের আসামে বাংলাদেশ মিশন ঘিরে বিক্ষোভ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারতে বাংলাদেশ মিশনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। গতকাল শনিবার ভারতের আসাম রাজ্যে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে হিন্দুত্ববাদী চারটি সংগঠন।
এদিকে গত কয়েক দিনে টানা বিক্ষোভের পর গতকাল ভারতের দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ মিশন ঘিরে কোনো বিক্ষোভ হয়নি। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আজ রোববারও বাংলাদেশের সব মিশনে ভিসা সেবা বন্ধ থাকছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ বারবার নাকচ করে আসছে সরকার। বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে উল্লেখ না করতেও বলা হয়েছে দিল্লিকে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিচ্ছে সরকার।
আসামে বিক্ষোভ
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কাছে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দুরাষ্ট্র দাবি সমিতি, হিন্দু যুব-ছাত্র পরিষদ, আসাম রাষ্ট্রীয় হিন্দু ফ্রন্ট ও আসাম হিন্দু ঐক্য মঞ্চের সমর্থকেরা।
ঢাকা ও আসামের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানায়, হিন্দুত্ববাদী চার সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা গতকাল গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশনের সামনে টানা দ্বিতীয় দিন বিক্ষোভ করেন। গতকালের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ জনের মতো। তবে বিক্ষোভের আগে থেকে বাংলাদেশ মিশন স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছিল। ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে গতকাল সকাল থেকে বাংলাদেশ মিশনের কাছে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মিশন অভিমুখে এলে মিশন থেকে ১০০ মিটারের কম দূরত্বে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে বিক্ষোভকারীদের একটি দল মিশনে গিয়ে ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ’ জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়।
এর আগে গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের গেটের কাছে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে তাঁরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের দীপু দাসের হত্যাকাণ্ডসহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল মিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ হলেও গতকাল দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ মিশন ঘিরে কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়ি মিশনে ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে। ঢাকা থেকে পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার পর এসব মিশনে ভিসা সেবা চালু হবে। তবে আগামীকাল সোমবার থেকে মুম্বাই মিশনে ভিসা সেবা আবার চালু হবে।
২৯০০ সহিংসতা নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের আগের অবস্থানের যে পরিবর্তন হয়নি, সেটি গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৯০০টির বেশি সহিংসতার ঘটনা স্বাধীনভাবে নথিভুক্ত হয়েছে, যেগুলোকে শুধুই ‘মিডিয়া অতিরঞ্জন’ বা ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আমরা কীভাবে দেখি, সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট।’
বাংলাদেশের কূটনীতিকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁদের বেশ কয়েকজন ওই সংখ্যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এত বিপুল সংখ্যায় সহিংসতার ঘটনা আদৌ ঘটেছে কি না আর কীভাবে সেই সংখ্যা নথিভুক্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, হুট করে ২ হাজার ৯০০ সংখ্যাটি কেন, কীভাবে এল! যদি সহিংসতার ঘটনা ঘটেই থাকে, তবে আগে কেন ভারত সে কথা বলেনি।