প্রবল চাপে পড়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহাছবি: এএনআই

প্রবল চাপে পড়েছেন ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা। একদিকে চাপ সৃষ্টি করেছে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও তার শরিক দলেরা। অন্যদিকে চাপ আসছে সব দলের পক্ষ থেকে। এই সাঁড়াশি আক্রমণের মোকাবিলা উপরাজ্যপাল কীভাবে করবেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

এনসি চাপ সৃষ্টি করেছে নতুন বছর সরকারি ছুটির তালিকায় শের-ই-কাশ্মীর শেখ আবদুল্লার জন্মদিন ও শহীদ দিবস স্থান না পাওয়ায়। অন্যদিকে সর্বদলীয় চাপ সৃষ্টি হয়েছে জম্মুতে কাটরার সমতল থেকে পর্বতশীর্ষে বৈষ্ণ দেবীর মন্দিরে সহজে পৌঁছানোর জন্য রোপওয়ে তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য শুরু হয়েছে ধর্মঘট। সেই দাবিতে জোটবদ্ধ হয়েছে শাসক ও বিরোধী সব পক্ষ।

৫ ডিসেম্বর শেখ আবদুল্লার জন্মদিন এবং ১৩ জুলাই শহীদ দিবস ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। ১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই ডোগরা বাহিনীর হাতে ২২ জন কাশ্মীরি মুসলমান নিহত হয়েছিলেন। এনসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বছরের এই দুই দিন ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হওয়া ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর কেন্দ্রীয় শাসনে ওই দুই ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে এনসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে ওই ছুটি ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর উপরাজ্যপালের নির্দেশে বার্ষিক ছুটির যে তালিকা প্রকাশিত হয়, তাতে ওই দুটি ছুটি বাতিল দেখানো হয়েছে।

এনসি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নির্বাচিত সরকার না উপরাজ্যপাল—কার হাতে থাকবে তা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত এ ধরনের অবাঞ্ছিত বিতর্কের অবসান ঘটবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব তারা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুক।

এই বিতর্কে অবশ্য বিরোধী বিজেপি উপরাজ্যপালের পক্ষে। তারা মনে করে, দুটি ছুটিই বিতর্কিত। সরকারের উচিত বিভাজনের রাজনীতি না করে সবাইকে নিয়ে চলা।

ছুটির প্রশ্নে সরকার ও বিরোধীরা ভিন্নমত প্রকাশ করলেও কাটরা থেকে বৈষ্ণ দেবী মন্দির পর্যন্ত রোপওয়ে নির্মাণের বিরোধিতায় দুই পক্ষ একজোট হয়েছে।

ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে বৈষ্ণ দেবীর মন্দির গুরুত্বপূর্ণ। জম্মুর কাটরা থেকে সাত কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে ওই মন্দিরে যেতে হয় পদব্রজে। অমরনাথের মতো এই তীর্থস্থানের ওপরেও নির্ভরশীল ওই এলাকার সব সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতা যাঁদের নেই, তাঁরা ঘোড়া, খচ্চর বা পালকিতে চেপে পর্বতশীর্ষে ওঠেন। অনেকে যান ডুলিতে, যা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যান সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ ওই যাত্রাপথে রয়েছে শয়ে শয়ে দোকান। পূজার উপকরণ ছাড়াও যেখানে পুণ্যার্থীদের জন্য খাবারদাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আশঙ্কা, রোপওয়ে হলে এই যাত্রা পথের দোকানদার, ঘোড়া, খচ্চরের মালিক ও কুলি-বাহকদের রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কাটরার হোটেলমালিকেরাও। ৩০০ কোটি রুপি খরচ করে রোপওয়ে তৈরির বিরুদ্ধে তাই দলমত–নির্বিশেষে আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয় মানুষ। এনসি, বিজেপি, কংগ্রেস, পিডিপি, সিপিএমসহ সব দল প্রতিবাদে মুখর। আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জম্মুর ব্যবসায়ীরাও, বৈষ্ণ দেবীর তীর্থযাত্রীদের ওপর যাঁদের অর্থনীতি নির্ভরশীল।

রোপওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাতা বৈষ্ণ দেবী দেবস্থান বোর্ড। সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের (পরিবেশ সংরক্ষণে জাতীয় প্রতিষ্ঠান) নির্দেশেই রোপওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত। লক্ষ্য—ধীরে ধীরে হাঁটাপথে ঘোড়া, খচ্চরের চলাচল কমিয়ে দূষণ রোধ করা। ধর্মঘটের জন্য সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থার অবসানে উপরাজ্যপাল এক কমিটি গঠন করেছেন। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, সিদ্ধান্ত বদল না হলে কোনো আলোচনাই নয়।