নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে কংগ্রেস ছাড়লেন গুলাম নবী

গুলাম নবী আজাদ

অবশেষে কংগ্রেস ছাড়লেন গুলাম নবী আজাদ। দীর্ঘ ৫২ বছরের সংশ্রব ত্যাগ করে ৭৩ বছর বয়সী এই কাশ্মীরি নেতা আজ শুক্রবার নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিলেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে তিনি দলের ক্রমাবনতি ও বিপর্যয়ের জন্য রাহুল গান্ধীর ‘অপরিণত মস্তিষ্ক’, ‘শিশুসুলভ আচরণ’কে সরাসরি দায়ী করেছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, কংগ্রেস সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে, যেখান থেকে পরিত্রাণের আর কোনো উপায় নেই। দলের রিমোট কন্ট্রোল রাহুলের হাতে। সোনিয়া নামেই সভানেত্রী। যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন রাহুল ও তাঁর স্তাবকেরা। কখনো কখনো সিদ্ধান্ত নেন তাঁর সহকারী ও দেহরক্ষীরাও।

গুলাম নবীর দলত্যাগের পর আরও এক প্রবীণ নেতা রাজ্যসভার সাবেক সদস্য আনন্দ শর্মাকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। গুলাম নবীর মতো হিমাচল প্রদেশের এই নেতাও মাত্র কদিন আগে তাঁর রাজ্যে আগামী বিধানসভা ভোটে দলীয় দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন। মধ্য প্রদেশের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার পর সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেস ছাড়েন পাঞ্জাবের অমরিন্দর সিং ও উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণ নেতা জিতিন প্রসাদ। অশ্বিনী কুমার ও কপিল সিব্বালও দলত্যাগ করেন। এবার কংগ্রেস ছাড়লেন গুলাম নবী।

অত্যন্ত কড়া ভাষায় রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে গুলাম নবী পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ২০১৪ সালে ভোটে হারার প্রধান কারণ রাহুল। নিজের সরকারের তৈরি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জনসমক্ষে ছিঁড়ে ফেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে শুধু অপমানই করেননি, নিজের ঔদ্ধত্যও জাহির করেছিলেন। ইন্দিরা, রাজীব ও সোনিয়া গান্ধীর প্রশংসা করেও গুলাম নবী লিখেছেন, আট বছর ধরে এক চপলমতি ব্যক্তিকে নেতা হিসেবে দল চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ফলে রাজনীতির সব পরিসর দখল করেছে বিজেপি ও আঞ্চলিক দলগুলো। গুলাম নবী বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার যে রীতি কংগ্রেসে ছিল, রাহুল ও তাঁর স্তাবকেরা তা চুরমার করে দিয়েছেন।

গুলাম নবী দলত্যাগ করলেন সেই সময়, যখন সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা তিনজনই বিদেশে। দলের সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে। নির্বাচন আরও এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাহুলও সভাপতি হতে এখনো অনাগ্রহী। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ৭১ বছরের অশোক গেহলটকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা বাড়ছে। এদিকে আগামী মাস থেকে ‘ভারত জোড়’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। এই কর্মসূচিতে রাহুলসহ কংগ্রেসের নেতারা কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পদযাত্রা করবেন বলে ঠিক হয়েছে। এই সময় কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সোনিয়াকে লেখা চিঠিতে গুলাম নবী বললেন, ‘প্রথমে আপনি, তারপর রাহুলের নেতৃত্বে ২০১৪ সাল থেকে কংগ্রেস পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছে। সেই থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোট ৪৯টি বিধানসভা ভোটের মধ্যে দল ৩৯টিতে হেরেছে। মাত্র চারটি রাজ্যে জিততে পেরেছে ও ছয়টিতে জোট শরিক হিসেবে ছিল। আজ কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে মাত্র দুটি রাজ্যে! অন্য দুই রাজ্যে জোট শরিক!’

গত লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর ২০২০ সালে গুলাম নবী, কপিল সিব্বাল, আনন্দ শর্মার সঙ্গে মোট ২৩ জন কংগ্রেস নেতা সোনিয়াকে এক চিঠি লিখে দলের সর্বস্তরে গণতন্ত্র ফেরানো ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই থেকে এই গোষ্ঠী ‘জি–২৩’ নামে পরিচিত। রাজ্যসভায় আর মনোনয়ন পাবেন না বুঝেই গুলাম নবী, কপিল সিব্বাল বা আনন্দ শর্মারা বিদ্রোহের পথে এগিয়েছেন বলে কংগ্রেসের একাংশের ধারণা। তিনজনই আর মনোনীত হননি। রাজ্যসভায় গুলাম নবীর বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেঁদে ফেলেছিলেন। চলতি বছরে তাঁকে বিজেপি সরকার পদ্মভূষণ সম্মান দেয়। রাজ্যসভার সদস্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মোদি সরকার তাঁকে সরকারি বাংলো ছাড়ার নির্দেশ দেয়নি।

গুলাম নবী এবার কী করবেন? পদত্যাগপত্রে নিজেই নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে লিখেছেন, ‘সারা জীবন যে আদর্শ নিয়ে কাটালাম, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে সেই আদর্শকে বাঁচিয়ে রেখে এগোনোর চেষ্টা আমি ও আমার সহকর্মীরা করে যাব।’

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, গুলাম নবী নতুন দল গড়ে জম্মু–কাশ্মীরের আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিজেপির পূর্ণ সমর্থন তিনি পাবেন। ২০০৫ সালের নভেম্বরে তিনি জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিন বছর পর ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পিডিপি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে গুলাম নবী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপির মদদে দ্বিখণ্ডিত জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা গুলাম নবী আজাদের কাছে ক্রমে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন হরিয়ানার নেতা কুলদীপ সিং বিষ্ণোই। গুলাম নবীকে তিনি বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন।