ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যত যুদ্ধ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের কাছে বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধবিমান দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ ৭ মে, উইয়ানছবি: এএফপি

পরমাণু অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আজ বুধবার কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা ও সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সর্বশেষ এই সংকট শুরু হয়েছে। ওই হামলায় দুই পক্ষেই প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

নয়াদিল্লি দাবি করেছে, গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই পর্যটক।

অবশ্য ইসলামাবাদ ভারতের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

১৯৪৭ সালের রক্তক্ষয়ী দেশভাগের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে। এই সংঘাত কখনো ছোটখাটো পরিসরে শেষ হয়ে গেছে, আবার কখনো পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭: দেশভাগ

দুই শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। এরপর হিন্দু-অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তান নামে এই উপমহাদেশে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

অব্যবস্থাপনায় ভরা এই দেশভাগ ব্যাপক রক্তপাতের জন্ম দেয়, যাতে ১০ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।

কাশ্মীরের রাজা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যান—তিনি ভারত নাকি পাকিস্তান, কার সঙ্গে যোগ দেবেন।

রাজার শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করার পর পাকিস্তান-সমর্থিত যোদ্ধারা কাশ্মীরে হামলা চালায়। এ সময় তিনি ভারতের সাহায্য চান। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়।

১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ৭৭০ কিলোমিটার (৪৮০ মাইল) দীর্ঘ ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ কাশ্মীরকে বিভক্ত করে। এই ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ পরে ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’ (এলওসি) হিসেবে পরিচিত হয়।

১৯৬৫: কাশ্মীর

পাকিস্তান ১৯৬৫ সালের আগস্টে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালালে দ্বিতীয়বারের মতো দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

১৯৭১: বাংলাদেশ

পাকিস্তান ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতাকামী আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। ১৯৪৭ সাল থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ ছিল।

৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। ওই সময় লাখ লাখ মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।

একটা পর্যায়ে ভারত ওই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

১৯৮৯-৯০: কাশ্মীর

১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হয়। ওই সময় ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি জনগণের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরবর্তী কয়েক দশকে হাজার হাজার সেনা, বিদ্রোহী ও সাধারণ নাগরিক নিহত হন।

ভারত অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান বিদ্রোহীদের অর্থ সহায়তা ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

১৯৯৯: কারগিল

পাকিস্তান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী কারগিল পর্বতের বরফাচ্ছাদিত উঁচু ভূমিতে ভারতীয় সামরিক পোস্ট দখল করে নেয়।

ইসলামাবাদ সংঘাতের সময় তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কিছু অংশ মোতায়েন করেছিল—এমন গোয়েন্দা তথ্য জানার পর ওয়াশিংটনের প্রবল চাপে পাকিস্তান সেখান থেকে পিছু হটে।

১০ সপ্তাহের ওই সংঘাতে অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হন।

২০১৯: কাশ্মীর

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন সদস্য নিহত হন।

ভারতে তখন সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার–প্রচারণা চলছিল। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে কথিত একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়েছিল বলে ভারত দাবি করে থাকে।

তখন ভারতের একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভূপাতিত করে পাইলটকে আটক করা হয়। অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে নিরাপদে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।