সিএএর আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পেলেন ৩০০ বিদেশি

নয়াদিল্লিতে সিএএর আওতায় নাগরিকত্ব সনদ তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রসচিব, ১৫ মেছবি: এএনআই

লোকসভার নির্বাচন চলাকালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) ৩০০ বিদেশিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বুধবার রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ওই ৩০০ জনের মধ্যে ১৪ জনের হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন। বাকিদের কাছে সেই সনদ ই–মেইল মারফত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই বিদেশিরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে চলে এসেছিলেন।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিজেপি সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস করে। এ নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। দিল্লিতে দাঙ্গাও হয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যেসব নাগরিক ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে এসেছেন, বিজেপি সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে।

কারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য, সেটাও ওই আইনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়। বলা হয়, একমাত্র হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানরাই এই আইনে নাগরিকত্ব পাবেন। কেন অত্যাচারিত মুসলমানেরা নন, সেই বিতর্কে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অরাজনৈতিক সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, এই আইন ন্যায্য নয়, সংবিধানবিরোধী। কারণ, এই আইনে ধর্মীয় কারণে নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো বিষয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

সমালোচনার মুখে সরকার ও বিজেপি নেতারা দাবি করেন, এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না।

পাঁচ বছর আগে আইন পাস হলেও এটি চালু করা হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ। নির্বাচনের ঠিক আগে বিধিমালা তৈরির মধ্য দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের কোনো ভূমিকা রাখেনি। সে জন্য সবকিছু করা হচ্ছে অনলাইনে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনলাইনে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবেদনপত্র বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি খতিয়ে দেখেছে। তাদের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই আইনে কারা নাগরিকত্ব পেলেন, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্রসচিব দিল্লিতে যাঁদের হাতে সনদ তুলে দিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন। দিল্লির একাংশে বসবাস করেন।

পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল গত মার্চে বিজ্ঞপ্তি জারির পর। দেখা দিয়েছিল অনেক সংশয়। যেসব মতুয়া এ দেশের নাগরিক না হয়েও সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা ও নাগরিক অধিকার পেয়ে আসছেন, তাঁদের মনে নানা রকম প্রশ্ন ওঠে। যেমন প্রচার করা হয়েছিল, নাগরিকত্ব দেওয়া হবে শর্তহীন। অথচ অনেক শর্ত রাখা হয়েছে। চাওয়া হয়েছে অনেক নথি।

সেসব মেনে আবেদন করার অর্থ প্রথমেই স্বীকার করে নিতে হবে, আবেদনকারী এ দেশের নাগরিক নন।

তারপরও যদি নাগরিকত্ব না জোটে, তা হলে কী হবে, সেই প্রশ্নে আলোড়িত হতে থাকে মন।

সিএএর আওতায় আবেদন নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা পক্ষে–বিপক্ষে নানা মত ও অভিমত দিতে থাকেন।

এ অবস্থায় নাগরিকত্ব দেওয়ার খবরে ভোটের রাজনীতি অন্য মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে।

কেন্দ্রের ঘোষণা ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তানের নাগরিকদের হাতে ভারতের নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেওয়ার কর্মসূচি এমন সময়ে গৃহীত হয়েছে, যখন দেশে সাধারণ নির্বাচন চলছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি যা বলেন, তা করেন। সব উদ্বাস্তু ভাই–বোনকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি, এই আইনে প্রত্যেককে আমরা নাগরিকত্ব দেব।’

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসাতে মতুয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। ধারণা করা হচ্ছে, নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ওই এলাকার ভোটে বিজেপিকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা সে কারণে উৎফুল্ল। তৃণমূল নেতারা সাবধানী।