মণিপুর রাজ্যে ফের সংঘর্ষ, কারফিউ জারি

মেইতেই সম্প্রদায় তফসিলি আদিবাসী হিসেবে সংরক্ষণ পেতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মণিপুর হাইকোর্ট। এরপরই বিক্ষোভ শুরু করেন উপজাতিরা। শুরু হয় সংঘাত-সহিংসতা
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে কয়েক দিন বিরতির পর আবারও নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানী ইম্ফলে এ ঘটনা ঘটে। নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এনডিটিভির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ জানায়, রাজধানী ইম্ফলের নিউ চেকন এলাকায় মেইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের কয়েকজনের মধ্যে বাজারের জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ বাধলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে মণিপুর রাজ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।

হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে ৩ মে চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর’ (এটিএসইউএম) ‘আদিবাসী সংহতি পদযাত্রা’র ডাক দেয়। সেখান থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলা এ সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। কয়েক কোটি রুপির সম্পত্তির ক্ষতি হয়। লাখো মানুষ ঘর ছেড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়।

মণিপুরের ইতিহাসবিদ ও লেখক মালেম নিঙথৌজা প্রথম আলোকে বলেন, একটা বড় সমস্যা হলো, মেইতেইরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও সমতলে মাত্র ৫ শতাংশ বা তারও কম জমি তাদের কাছে আছে। যদিও মেইতেইরা মণিপুরের জনসংখ্যার প্রধান অংশ। কিন্তু তারা উপজাতি হিসেবে সংরক্ষিত নয় বলে বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চলে জমি কিনতে পারবে না।

আরও পড়ুন

মালেম নিঙথৌজা আরও বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে কুকিদের জমি বেশি থাকলেও, জনসংখ্যা কম। সেখানে ক্ষমতাশালী কুকিরা বরাবরই রাষ্ট্রের মদদ পেয়ে এসেছে। তাদের সাহায্যে সেনাবাহিনী বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।’

এ ছাড়া সম্প্রতি মাদক পাচারের অভিযোগে পার্বত্য জনগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আফিম চাষ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে মণিপুর সরকার। বনাঞ্চল থেকে পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার চেষ্টাও চালানো হয়েছে। ‘এই সবকিছু শেষ পর্যন্ত কুকি জনগোষ্ঠীকে উদ্বিগ্ন এবং উত্তেজিত করেছে। তারই ফল এ জাতি দাঙ্গা। এর জন্য অনেকটাই সরকার দায়ী।’ বলেন নিঙথৌজা।

কুকি, নাগাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পড়াশোনা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে মেইতেই সম্প্রদায়। এ অবস্থায় যদি তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তাদের আরও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়, তবে তারা আরও এগিয়ে যাবে। এতে পিছিয়ে পড়বে অন্যান্য জনজাতীয় জনগোষ্ঠী।